এসএসসি পর্যায়ের ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যেসব পাঠ্যবইয়ে ‘সাম্প্রদায়িক রুপ’ দেয়া হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। ২০১৮ সালের পাঠ্যবইয়েই এই পরিবর্তন আসছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসএসসি পর্যায়ের ১২টি বই পর্যালোচনা করে সহজ, সাবলীল করার কাজ চলছে। প্রয়োজনে ছোট করা হবে। বইগুলি হলো- বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বাংলাদেশ ও বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস, গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও হিসাব বিজ্ঞান। একেকজন শিক্ষাবিদের তত্ত্বাবধানে এসব বই পরিমার্জনের কাজ হবে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, ‘এখন থেকে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের সময় মডেল উত্তরপত্র দেওয়া হবে পরীক্ষকদের।’
১২টি বই আরো উন্নত, মার্জিত ও সহজবোধ্য করে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে বলে জানান নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাঠ্যবই নিয়ে আরেকটা বড় অভিযোগ- এটার মানসর্ম্পকে ও বোঝার সর্ম্পকে। সেখানেই ১২টি বই চিহ্নিত করা হয়েছে।’
এছাড়া কারিকুলাম, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলপ্রণয়ন পদ্ধতিসহ অন্যান্য দিক পর্যালোচনা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য- শিক্ষা ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি শিক্ষার মানোন্নয়ন, সংস্কার, সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শুরু হয়ে এ বৈঠক দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফরাস উদ্দিন আহম্মেদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শ্যামলি নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম প্রমুখ অংশ নেন।
হঠাৎ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আপনারা পাঠ্যবইয়ে হেফাজতীকরণের বিষয় জানতে চাচ্ছেন। বাংলা বিষয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অধ্যাপক শ্যামলি নাসরিন চৌধুরীকে। উনি একজন শহীদ জায়া। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি ভালোভাবে পর্যালোচনা করে আমাদের উদ্ধার করবেন বলে মনে করি।’ তিনি আসন্ন বাজেট শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।
অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘আমি অর্থনীতি বইটির দায়িত্বে আছি। সেখানে আমি বড় ধরণের কোন সমস্যা পায়নি। তবে কোনো ভুল থাকলে সংশোধন করা হবে। জটিলতা থাকলে সহজ করা হবে। সংবিধানের বিরুদ্ধে কিছু থাকলে বাদ যাবে।’
অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে রাতারাতি বা বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সংস্কার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যুগের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে তা করা হয়।’
বইয়ের বোঝা কমানোর কাজ চলছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে ৫/৬টি বই থাকলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা ১৩টি হয়ে যায়। এটা আমরা চাইলেই কালকের মধ্যে বাদ দিতে পারব না। আলাদা একটি কমিটি এর ওপর কাজ করছে।’
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় সময় কমিয়ে আনার কাজ চলছে বলেও জানান মন্ত্রী। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু অসৎ শিক্ষকের কারণে প্রশ্নপত্র বিতরণ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। এটি করে শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের চরিত্র নষ্ট করে দিচ্ছেন। আর যেসব শিক্ষক ক্লাশরুমে উত্তরপত্র বলে দিচ্ছে- এই ধরণের শিক্ষক আমরা রাখব না।’
শিক্ষা আইন করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোন গাইড বই চলবে না, কোচিং বাণিজ্যও চলবে না।’