ডিএমপি নিউজঃ কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারে রাঙাপরী জুয়েলার্সে চুরির রহস্য উদঘাটনসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ মঞ্জুরুল হাসান শামীম।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২) গাজীপুরের কড্ডা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শামীমকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিম। এ সময় তার হেফাজত থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণের বিক্রয়লব্ধ ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ইমিটেশন গহনা উদ্ধার করা হয়।
আজ রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২) দুপুর ১২:০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। এসময় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার, পিপিএম (বার), মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ ফারুক হোসেন, অভিযান পরিচালনাকারী ডিবি মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু তালেবসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, গত ০৫/০২/২০২২ তারিখ আনুমানিক রাত ০১:০০ টায় ভাষানটেক থানার পুরাতন কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলার রাঙাপরী জুয়েলার্সে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র আনুমানিক ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ চুরি করে পালিয়ে যায়। এ সংক্রান্তে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট শামীমকে গ্রেফতার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য ও চুরির রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে তিনি বলেন, চুরির ঘটনার এক মাস পূর্বে চক্রের ২ জন সদস্য মাসুদ ও ইলিয়াস মিথ্যা নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে উক্ত মার্কেটে যথাক্রমে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপারের চাকরি নেয়। চাকরিরত অবস্থায় তারা উল্লেখিত দোকানে চুরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য রেকি করাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকে। পরিকল্পনামাফিক ঘটনার আগের দিন চক্রের অন্য এক সদস্য শাহীন মাস্টার উক্ত মার্কেটে ১টি দোকান ভাড়া করে মালামাল তোলার নাম করে বক্স বিশিষ্ট টেবিল ব্যবহার করে কৌশলে তালা ভাঙ্গার সরঞ্জামাদি মার্কেটে প্রবেশ করায়। ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ০১:০০ টায় চক্রের আরো ২ সদস্য শ্রীকান্ত ও তালা ভাঙ্গার মিস্ত্রী রাজা মিয়া মার্কেটে প্রবেশ করে। অতঃপর আগে থেকে কাজে থাকা মাসুদ ও ইলিয়াসকে সাথে নিয়ে চোরাই কাজ সম্পন্ন করে। এরপর ভোর ০৫:০০ টায় মার্কেট হতে বের হয়ে কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকার তাদের ভাড়াকৃত বাসায় চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, সেখানে শাহীন মাস্টার ও গ্রেফতারকৃত মঞ্জুরুল হাসান শামীম পূর্ব হতেই চক্রের অন্য সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ভাড়াকৃত বাসায় সকল সদস্যের উপস্থিতিতে প্রকৃত স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ আলাদা করা হয়। আনুমানিক সকাল ১০:০০ টায় শ্রীকান্ত চোরাইকৃত স্বর্ণ তার পূর্ব পরিচিত এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ টাকা নিয়ে পুনরায় ভাড়াকৃত বাসায় ফিরে আসে। অতঃপর চোরাইকৃত স্বর্ণ বিক্রয়লব্ধ অর্থ, ইমিটেশন গহনা ও চোরাইকৃত নগদ অর্থ নিজেদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে যে যার মত উক্ত বাসা ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
এই চোর চক্র সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, এই চক্রের মূল হোতা ফ্রান্স প্রবাসী নাসির। সে প্রায় সাত বছর পূর্বে দেশ ত্যাগ করে ফ্রান্স চলে যায় এবং সেখানে বসে চোর চক্র নিয়ন্ত্রণ ও চুরির পরিকল্পনা করে। নাসির এ চক্রের সদস্যদের থাকার বাসাভাড়া ও প্রাথমিক অর্থের যোগান দিয়ে থাকে। প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে এবং তারা সে অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকে। ইতোপূর্বে তারা ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশ এলাকায় একাধিক চুরি করেছে বলে জানা যায়।
নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের পূর্বে পুলিশ ভেরিফিকেশনের অনুরোধ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা।
ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার, পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলামের নের্তৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ অভিযানটি পরিচালিত হয়।