ডিএমপি নিউজঃ দেশের জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জানমাল রক্ষা ও অতিমারী করোনাকালে মানবসেবা করতে গিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় বিগত ২০২১ সালে বাংলাদেশ পুলিশের ১৩৮ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আত্মোৎসর্গকারী এ সকল পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পালিত হয়েছে “পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২২’।
দেশব্যাপী সকল পুলিশ ইউনিটে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের পাশাপাশি ঢাকার মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হয়।
আজ মঙ্গলবার (১ মার্চ) “পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’’ উপলক্ষে সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর পুলিশ মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদেরকে। দৃষ্টিনন্দন পুলিশ মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করেন।
আত্মোৎসর্গকারী এ সকল পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সাত পুলিশ সদস্যের পরিবারের হাতে সম্মাননা, আর্থিক অনুদান, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।
পুলিশ কনভেনশন হলে এক আলোচনা সভার শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যগণের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন বলেন, “পুলিশকে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভবপর হবে না। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকতে হবে”।
এ সময় তিনি দেশের সংকটকালীন সময়ে পুলিশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি আরো বলেন, “আমাদের নৈমিত্তিক দায়িত্বের পাশাপাশি মানুষকে আরো কিভাবে আইনী সেবা করা যায় তার চিন্তা করতে হবে। আমরা সকলে মিলে একসাথে কাজ করলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর যে স্বপ্ন; তা বাস্তবায়ন হবে’’।
ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এ দেশের পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করেছে, শাহাদাতবরণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সেই থেকে শুরু করে প্রতি বছর মানুষের সেবা করার জন্য, নিরাপত্তার জন্য, এ দেশের শান্তি-শৃংখলার জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য আত্মোৎসর্গ করছেন। করোনাকালে গত দুই বছরে দেশমাতৃকার সেবায় ১০৬ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২০২১ সালে চাকুরিত অবস্থায় বিভিন্ন পদবীর ৩৪৬ পুলিশ বিভিন্ন কারণে মৃত্যু বরণ করেছেন। এদের মধ্যে ১৩৮ জন পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন’’।
তিনি বলেন, ‘‘শান্তিকালীন সময়েও এক ধরণের যুদ্ধে নিয়োজিত থাকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এ যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে যারা সমাজ ও রাষ্ট্র ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয় । যে দেশ বীরদের সম্মান দেয় না, সে জাতিতে কোন বীর জন্মায় না। আমাদের দেশ বীরের দেশ’’।
নিহত পুলিশ সদস্যগণের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আইজিপি বলেন, “যখন আমাদের একজন পুলিশ সদস্য আত্মাহুতি দেন, তখন আমরা শুধু একটি মুখচ্ছবিকে হারাই না, আমরা আমাদের একজন সহকর্মী, সহযোদ্ধা, সাথী, বন্ধুকে হারাই। আবার একই সাথে পরিবার হারায় তার প্রিয় মানুষকে। বাবা তার সন্তান, স্ত্রী তার স্বামী, সন্তান তার বাবা অথবা মাকে হারায়। এটার একটা বহুমাত্রিক ক্যানভাস রয়েছে”।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্ত্যেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, “কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যগণ তাদের উপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে যে দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন তা বাংলাদেশ পুলিশ চিরকাল গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আমাদের এই সহকর্মীদের এই ত্যাগ বাংলাদেশ পুলিশকে প্রতি মুহূর্তে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম(বার) সহ বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকাস্থ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১লা মার্চ পালন করা হয় ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’।