ডিএমপি নিউজ: গত ১৫ জুলাই’১৭ তারিখ ডিএমপি নিউজে “মাঝনদী থেকে উদ্ধার ডুবন্ত শিশু: পরিচয় খুঁজছে পুলিশ” শিরোনামে প্রকাশিত হয় একটি প্রতিবেদন। একই সাথে সকলের নিকট উক্ত তথ্য পৌঁছে দিতে শেয়ার করা হয় ডিএমপি’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে। সেই ফেসবুকের সূত্র ধরেই অসহায় প্রতিবন্ধী মেয়ে সাবিহা খুঁজে পায় মায়ের কোল আর সন্তান হারা মা-বাবা পায় আদরের ধন। গত শনিবার মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিপিএম সশরীরে উপস্থিত থেকে সাবিহাকে তার বাব-মা’র হেফাজতে তুলে দেন।
এ ব্যপারে মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, গত ১১ জুলাই রাত ৮ টায় মানিকগঞ্জ জেলার কালিগঙ্গা নদীর পানিতে ভেসে আসা শিশু ডুবন্ত অবস্থায় ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ চিৎকার করে। সদর থানার খাগড়াকুড়ি গ্রামের জেলে মাফু বিশ্বাস চিৎকার শুনে নৌকা নিয়ে দ্রুত ছুটে এসে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ১০ বছরের মেয়েকে। পরে বুঝা যায় মেয়েটি কথা বলতে পারে না। মেয়ের পরিচয় সনাক্ত না হওয়ায় জেলে মাফু বিশ্বাস মেয়েটিকে মানিকগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিপিএম মেয়েটির ভরণ-পোষণ এর জন্য উদ্ধারকারী জেলেকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এসময়ে পুলিশ মেয়েটির পরিচয় উদঘাটনের জন্য সোস্যাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সংবাদটি ডিএমপি নিউজে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি ডিএমপি’র ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। ফেসবুকে প্রকাশিত ছবি দেখে মেয়েটির মা-বাবা ছুটে আসে মানিকগঞ্জ সদর থানায়। তখন জানা যায় মেয়েটির নাম-ঠিকানা ও হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে।
মেয়েকে নিতে এসে আবেগাপ্লুত শিশুটির বাবা মোঃ মিলন খাঁ জানান বিস্তারিত ঘটনা। তিনি বলেন যে, সে পেশায় একজন রিক্সাচালক। পরিবার পরিজন নিয়ে সে নবীনগর, জামগড়া, গাজীরচট ৭নং ওয়ার্ডের ফিরোজ সাহেবের বাড়ীতে ভাড়া থাকেন। গত ১১ জুলাই’১৭ তারিখ মেয়ে সাবিহা আক্তারসহ বাসযোগে ঢাকা হতে রাজবাড়ী যাচ্ছিলেন। যাত্রাপথে মেয়ে সাবিহা আক্তার বমি করে পড়নের কাপড় নষ্ট করে। রাত অনুমান সাড়ে সাতটায় তাদের বাস মানিকগঞ্জ থানাধীন তরা ব্রীজের নিকট আসলে মেয়েসহ তরা ব্রীজের নিচে নদীতে গিয়ে পড়নের কাপড় পরিস্কার করতে নামেন। পরিস্কার করা শেষ হলে মেয়েকে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে বলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে একটু দূরে যান মিলন। পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাবিহা হঠাৎ নদীতে পড়ে যায়। নদীতে প্রচন্ড স্রোত থাকায় সাবিহা দ্রুত মাঝ নদীতে ভেসে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সাবিহার সন্ধান না পেয়ে ফিরে যান মিলন।
সাবিহার সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে মিলন খাঁ বলেন, তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকেন ঐ বাসার এক নারী পলমল গার্মেন্টসে চাকরি করে। উক্ত নারী গার্মেন্টস কর্মী তার সহকর্মীর মোবাইলে ফেসবুকে সাবিহার ছবি দেখে শনাক্ত করে এবং আমাকে সংবাদ দেয়।
সাবিহার সন্ধান পেয়ে মিলন খাঁ দ্রুত মানিকগঞ্জ সদর থানায় হাজির হন। পরে সাবিহাকে পুলিশ সুপার নিজে তার হেফাজতে তুলে দেন।
পুলিশের সহযোগিতায় সাবিহাকে ফিরে পেয়ে মিলন খাঁ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দশটি বছর পর্যন্ত মেয়েকে লালন পালন করে হঠাৎ তাকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পুলিশের সহযোগিতায় আজ মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।
মিলন খাঁ আরও বলেন, যেসকল ব্যক্তি ও পুলিশ সদস্যগণের সহায়তায় আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি।