দিন পনেরো আগে হেডিংলিতে ওয়ান-ডে ম্যাচে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে ভারতকে হারানোর পর ‘মাইক-ড্রপ’ সেলিব্রেশনের মাধ্যমে তা উদযাপন করেছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অধিনায়ক জো রুট। অনেক সময় রকস্টার বা কমেডিয়ানরা তাদের পারফরম্যান্সের শেষে ঠিক যে ভঙ্গীতে মাইকটা স্টেজে ফেলে দেন, ঠিক সেই ভঙ্গীতে নিজের ব্যাটটা মাঠে ফেলে দিয়েছিলেন রুট।
পরে এই ভঙ্গীতে আনন্দ প্রকাশ করার জন্য তিনি নিজেই বিরাট আফশোস করেছেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক পরদিনই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ওটা ছিল আসলে একটা গাড়ি দুর্ঘটনার মতো। আমার গোটা কেরিয়ারে ক্রিকেট মাঠে ওরকম অস্বস্তিকর কাজ আমি কোনও দিন করিনি। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।
ভারতীয় দল যে মাইক-ড্রপ সেলিব্রেশন মোটেই ভালভাবে নেয়নি, সেটা হেডিংলিতেই বোঝা গিয়েছিল। সম্ভবত সবচেয়ে চটেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক ভিরাট কোহলি, যিনি ক্রিকেট মাঠে তার আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক বডি ল্যাঙ্গোয়েজের জন্য পরিচিত।
বুধবার এজবাস্টন টেস্টের প্রথম দিনেই তিনি রুটের ওপর মাইক-ড্রপের ‘বদলা’ নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে জো রুট যখন ৮০ রানে খেলছেন, তখন দুর্ধর্ষ থ্রো-তে তাকে রান আউট করে কোহলি তাকে যে ‘সেন্ড-অফ’ দেন সেখানেও তিনি মাইক-ড্রপের ভঙ্গী নকল করে দেখান।
সঙ্গে তিনি হাওয়ায় চুমু ছুঁড়ে দেন, ঠোঁটে আঙুল দিয়ে দর্শকদের চুপ করতে বলারও ভঙ্গী করেন। জো রুট ততক্ষণে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিয়েছেন, উল্টোদিকে ফিরে থাকায় তিনি নিজে ভিরাট কোহলির এই সব অঙ্গভঙ্গী দেখতে পাননি। তবে ড্রেসিং রুমে গিয়েই নিশ্চয় তিনি কোহলির মাইক-ড্রপ মোমেন্টও দেখে নিয়েছেন।
বিবিসির ভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার জোনাথন অ্যাগনিউ বলছেন, “কোহলির এই সেন্ড-অফকে কেন্দ্র করে দুটো দলের মধ্যে নির্ঘাত এবার ফুলঝুরি ছুটবে!” ভারতীয় ইনিংসে ভিরাট কোহলি ব্যাট করতে নামলে তাকে ইংল্যান্ড তাকে কীভাবে অভ্যর্থনা জানায় সেটাও দেখার বিষয় হবে বলে অ্যাগনিউ মনে করছেন।
কিন্তু ‘মাইক ড্রপে’র ভঙ্গী নিয়ে এই বিতর্কটা কেন? অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি বলছে, একটা কনসার্টের শেষে শিল্পীরা যখন হাতের মাইক্রোফোন ইচ্ছে করে নিচে ফেলে দেন, সেই মাইক ড্রপের মধ্যে দিয়ে শিল্পীর একটা ‘বিজয়’ (ট্রায়াম্ফ) আর ‘গর্বিত মনোভাবেরই’ (বোস্টফুল অ্যাটিটিউড) প্রতিফলন ঘটে।
সাম্প্রতিক কালে সফল পারফরম্যান্সের শেষে র্যাপার, পপস্টার বা কমেডিয়ানরা অনেকেই এই মাইক ড্রপ-কে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। এমন কী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-ও তার শেষ হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস ডিনারে ভাষণের শেষে ‘ওবামা আউট’ বলে মাইক ড্রপ করেছিলেন।
কিন্তু ক্রিকেট মাঠে জো রুট এই সংস্কৃতির আমদানি করার পর সবাই যে তা ভাল নজরে দেখছেন না, তা বলাই বাহুল্য। রুট নিজে মাইক ড্রপের ভঙ্গীতে ব্যাট ড্রপ করার পর এখন হয়তো অনুশোচনা করছেন, কিন্তু খেলাটা বোধহয় তার হাতের বাইরে বেরিয়ে গেছে। যদিও এজবাস্টন টেস্টে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো এই মাইক ড্রপ নিয়ে এখনও কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানা যায়নি।
ক্রিকেট মাঠে উদযাপনের অঙ্গভঙ্গী নিয়ে এর আগেও ভারত ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে বদলা নেওয়ার পালা চলেছে। ২০০২ সালে মুম্বই টেস্টে ভারতকে হারানোর পর ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফ গায়ের জামা খুলে সেলিব্রেট করেছিলেন।
মাসকয়েকের মধ্যে লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর তখনকার ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি নিজের জামা খুলে ফেলেন। প্যাভিলিয়নের ব্যালকনি থেকে খালি গায়ে তিনি সেই জামা ওড়াতে থাকেন – যা নিয়ে পরে বিতর্কও কম হয়নি।