১৯৯৬ সালে রামোজী রাও হায়দ্রাবাদের ৩০ কিমি দুরে পাহাড়ের কোলে ১৬৬৬ একর জায়গা নিয়ে রামোজী ফিল্ম প্রতিষ্ঠা করেন। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বিভিন্ন তরুশ্রেণী মাথা উচু করে আছে, বিশেষ করে তাল গাছের সারি। বন-জঙ্গলে ঘেরা, নীল স্বচ্ছ পানির লেক, অসাধারণ সব দৃষ্টি নন্দন নির্মান শৈলীতে ভরপুর পুরো এলাকা।
বর্তমানে এটা রামোজী গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফিল্ম সিটি হিসেবে রামোজী গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সার্টিফিকেট পাওয়া। এই সিটিতে সিনেমা থেকে সিরিয়াল সব কিছু তৈরীর সবরকম অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে।বলা হয়ে থাকে, কোন সিনেমার নির্মাতা শুধু স্ক্রিপ্ট নিয়ে এখানে এসে ফিল্ম নিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে। একটা সিনেমা তৈরী করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা সবই মজুদ আছে সেখানে। বিভিন্ন রকম হিন্দী, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম, কানাড়া, গুজরাটি, বাংলা, ওড়িয়া, ভোজপুরি ম্যুভি ছাড়া টিভি সিরিয়াল ও অ্যাড তৈরী হয় প্রতিনিয়ত। এছাড়াও ভারতের বিখ্যাত টিভি চ্যানেল ইটিভির হেড কোয়ার্টারও এখানে।
সেখানকার সাহাস বলে একটি জায়গা আছে যা আপনার রহস্যের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেবে, যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে রোমাঞ্চে ভরপুর একাধিক আকর্ষণ। প্রিন্সেস স্ট্রিট, নর্থ টাউন, ভাগবত সেট, অসকারি গার্ডেন, জাপানিজ় গার্ডেন, সান ফাউন্টেন গার্ডেন, মোগল গার্ডেন, স্যাঞ্চুয়েরি গার্ডেন, এবং অ্যাঞ্জ়েল ফাউন্টেইনের মতো অসাধারণ সব জায়গা রয়েছে। তাছাড়াও, রয়েছে মুভি ম্যাজ়িক পার্ক, পাখিরালয়, বাটারফ্লাই পার্ক, বনশাই গার্ডেন এবং কালার পার্ক। প্রত্যেকদিন একগুচ্ছ রোমাঞ্চকর অনুষ্ঠানও থাকে পর্যটকদের জন্য। ওপেনিং শো থেকে শুরু করে স্পিরিট অফ রামোজি শো, দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এসব তো আছেই, তার সাথে আছে মনোরম আবহওয়া। ফিল্ম সিটির মধ্যে স্কুল, কলেজ, মন্দির-মসজিদ-চার্চ, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট হায়দরাবাদ ভ্রমণে অবশ্য দ্রষ্টব্য।
সাহস রামোজি ফিল্ম সিটির ভিতরে অবস্থিত রয়েছে একাধিক অ্যাডভেঞ্চার। এমনই সব গেম রয়েছে, আপনি যদি চূড়ান্ত অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীও হন তারপরেও এক মুহূর্তের জন্যে হলেও আপনার বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠবে। তবে ভয়ের কিছু নেই, সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্রেনাররা রয়েছেন। অ্যাডভেঞ্চারের শুরুতেই হারনেস কোর্স।
প্রায় ৮ মিটার লম্বা একটি ব্রিজ়, ব্রিজ শুনে ভাববেন না হেলেদুলে রাস্তা পার করে দেওয়া যায়! ব্রিজ়টা বলতে গেলে খতরনাক কাঠের টুকরো আর নেটের তৈরি ব্রিজ় পারাপার করা চাট্টিখানি কথা নয়। তারপর এল নেটকোর্সে, বলতে পারেন পুরো একটা জালের দুনিয়া। বিভিন্ন আকারের জাল, জাল বেয়ে যেতে প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে বেশ ভালোই মজা পাবেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা ATV রাইডে প্রকৃতির বুকে এই রাইড জাস্ট ফাটাফাটি। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে সাইকেলিং বা বাকিংয়ের দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
এটি এখন ভ্রমণকারীদের কাছে জনপ্রিয় ভ্রমণ এর যায়গা হিসেবে বিবেচিত এবং সার্টিফাইড। এটি দেখতে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলংকা বহু যায়গা থেকে ঘুরতে আসে আর বিভিন্ন দেশের ফিল্মের শ্যুটিং করতেও এখানে এসে থাকে।
কিভাবে ঘুরবেন রামোজি ফিল্ম সিটি
গেট থেকেও প্রায় কয়েক কিলোমিটার দুরে রামোজি ফিল্ম সিটি । অপুর্ব সৌন্দর্য্যমন্ডিত সেই প্রাকৃতিক দৃশ্য। যার দুপাশে বুনো জঙ্গল আর ঝোপঝাড়ে ঢাকা পাহাড় ছড়িয়ে আছে। তার মাঝ দিয়ে একেবেকে চলছে ট্যুরিস্ট কোম্পানীর চায়না টাউন বাস। ট্যুরিস্ট কোম্পানীর বাস ভাড়া ১৫০ রুপি। এক স্পট থেকে আরেক স্পটে যেতে হবে এই বাসে চড়েই।
সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হয় এই ট্যুরটি। রামোজি ফিল্ম সিটির মধ্যে থাকতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও আছে। এখানে তারা এবং সিতারা বলে দুটি বেসরকারি হোটেল আছে। দুই দিন এক রাতের প্যাকেজে খরচ পড়ে জনপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। দেরি না করে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘুরে আসুন রামোজি ফিল্ম সিটি।
রামোজি ফিল্ম সিটি’র ভিতরে বিভিন্ন প্যাকেজ আছে যা টিকিট কেটে ঘুরতে হয়।
প্যাকেজগুলোর নাম ও টাকার পরিমাণ হলো-
ডে ট্যুরিজম প্যাকেজ
এর আওতার মধ্যে যা আছে-
জেনারেল ডে ট্যুর
(বাচ্চাদের জন প্রতি ৯৫০ রুপি এবং বড়দের জন প্রতি ১১৫০ রুপি)
হলিডে কারনিভাল ডে ট্যুর
( জন প্রতি ১২৫০ রুপি )
বাহুবলি প্রিমিয়াম এক্স:
( জন প্রতি ২৩৪৯ রুপি )
বাহুবলি নুন ফিস্টা
( জন প্রতি ২১৪৯ রুপি )
স্পেশাল প্যাকেজ
সাহাস কম্বো- (ফিল্ম সিটি ভিজিট + এ্যাডভেঞ্চার এক্সিপেরিয়েন্স + বাহুবলি)
( জন প্রতি ১৭৫০ রুপি এবং প্রবেশের সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত )
কিভাবে যাবেন?
হাওড়া স্টেশন থেকে সরাসরি ট্রেনে করে গেলে সেকেন্দারাবাদ স্টেশন নামতে হবে তারপর সি এন জি ভাড়া করে সরাসরি রামোজি ফিল্ম সিটি অথবা কলকাতা থেকে এয়ারে করে হাইদ্রাবাদ যেতে পারেন। ট্রেনে গেলে ৩০/৩১ ঘন্টা সময় লাগে আর এয়ারে গেলে ২ ঘন্টা ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে।
হাওড়া থেকে সেকেন্দারাবাদ জংশন (হাইদ্রাবাদ) পর্যন্ত প্রতিদিন ২ টি ট্রেন ছাড়ে।
১। ট্রেনের নাম: ফালাকনুমা এক্স:
ভাড়া: নন এসি ১২০০ এবং এসি ২৭২০ বালাদেশি টাকা
সময়: ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল ৭.২৫ টা এবং পৌছানোর সময় সকাল ৯.০৫ টা
পৌছাতে সময় লাগে ২৫ ঘন্টা ৪০ মিনিট
২। ট্রেনের নাম: ইস্ট কোস্ট এক্স:
ভাড়া একই পরিমান
সময়: ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল ১১.৪৫ টা এবং পৌছানোর সময় বিকাল ৫.১০টা
ভ্রমণটি সহজ করার জন্য ঘরে বসেই ট্রেনের/এয়ারের এবং হোটেলের বুকিং করতে পারবেন।
বুকিং করতে:
০১৭১৭-১৮৫৩৬০
০১৯৩৭-৭৭৭২৪২
bdindi17@gmail.com