সিরাজগঞ্জ জেলার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কের মুলিবাড়ি রেলক্রসিং থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে নলকা পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে।
২১ কিলোমিটার সড়কটি চারলেনে উন্নীত করা হলে সিরাজগঞ্জের সঙ্গে হাটিকুমরুল-বনপাড়া, পাবনা-নগরবাড়ি-বগুড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে। ঢাকা-উত্তরাঞ্চলের পণ্য পরিবহনের গতি বাড়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কের যানজট সৃষ্টি হলে বিকল্প সড়ক হিসেবে এই সড়কটি ব্যবহার করা যাবে। এজন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হলে সিরাজগঞ্জ শহর যানজট মুক্ত হবে। এই সড়ক দিয়ে বিসিক শিল্পপার্কের মালামাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সহজ হবে। সিরাজগঞ্জে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেলক্রসিং থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে নলকা পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে নলকা পর্যন্ত সড়ক দিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক যানবাহন চলাচল করে। এই সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে পাটকল, সিমেন্ট কারখানা, বিসিক শিল্প কারখানাসহ ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সড়কটি নিম্নমানের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই সড়কটির যথাযথ মান ও প্রশস্থতা উন্নীতকরণ প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে এই সড়কের দুপাশের বৈদ্যুতিক খুটি সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এতে দিনদিন সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক সড়কগুলোর দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই সড়ক দিয়ে দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। প্রকল্পটিতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় দুই শত কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে চলতি বছরের জুন মাসে এই সড়কের টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সিরাজগঞ্জ জেলাকে উত্তরবঙ্গের রোল মডেল করতে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিলাত মুন্না।
ইতোমধ্যে জেলা সদরের শিয়ালকোলে শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজ, নতুন করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইকোনমিক জোনের কাজ শুরুর জন্য ১১০০ একর ভূমি নির্ধারণ ও অধিগ্রহণের জন্য ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ, দ্রুত শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠাকল্পে মাটি ভরাটের জন্য ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ, পরিবেশ রক্ষায় কাটাখালী সংস্কার, মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট দ্রুত হস্তান্তর ও ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা, কামারখন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, সদর হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিট চালু, শিশু সার্জারি চালুকরণসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি, কামারখন্দে ৩১ শয্যার হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, নতুন উদ্যোগে শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণসহ নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কিছু শুরু হয়েছে আর কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল হোসেন দুলু জানান, আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ডিভাইডার না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুলিবাড়ি রেলক্রসিং থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে নলকা পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটি চারলেনে উন্নীত করতে পারলে যানজট অনেকটাই হ্রাস পাবে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের ব্যবসা বাণিজ্যেও প্রসারতা বাড়বে।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান জানান, সিরাজগঞ্জে শিল্পপার্কের কাজ চলছে। সড়কটি চারলেনে উন্নীত করা হলে সিরাজগঞ্জ শহর যানজট মুক্ত হবে। এ সড়ক দিয়ে বিসিক শিল্পপার্কসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সহজ হবে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। শিল্পপার্ক এলাকা দিয়ে এই সড়কটি নির্মাণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা যেন সহজেই তাদের মালামাল নিয়ে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারে এ কারণে এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলতি জুনে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।