বাড়তে থাকা সামাজিক আর অর্থনৈতিক ফারাকের বিরুদ্ধে সপ্তাহখানেক আগেই গর্জে উঠেছিলেন চিলির মানুষ। পুলিশ আর সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে তখন প্রাণ গিয়েছিল ১৭ জনের। আহত হন শতাধিক। আরও এক বার আর্থিক সাম্য, বর্ধিত বেতন আর পেনশনের দাবিতে রাস্তায় নামল চিলি। গত কাল রাজধানী সান্তিয়াগোতেই শুধু দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ সমবেত হন। দেশের অন্য শহরেও একই ভাবে বিক্ষোভে গলা ফাটিয়েছেন আরও কয়েক লক্ষ মানুষ।
২০১৭ সালে মধ্য বামপন্থী জোট সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরা। দক্ষিণপন্থী এই ধনকুবের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গত দু’বছরে ক্ষোভ জমেছে অনেকটা। এতটাই যে, কাল শহরের প্রতিটি রাস্তা ছিল সাধারণ মানুষের ভিড়ে রুদ্ধ। ট্যাক্সি থেকে বাস, ট্রাকের চালক, নিজেদের পেশা ছেড়ে তাঁরাও পা মেলান বিক্ষোভে। প্রেসিডেন্ট-বিরোধী পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল সান্তিয়াগোর রাস্তা। মিছিলের দাবি একটাই, ‘প্রেসিডেন্ট নিজের গদি ছাড়ো’। রংবেরঙের মুখোশ পরা ভিড়টা হাতে পতাকা নিয়ে আর ড্রাম পিটিয়ে সেই কথাই শুধু বলে গিয়েছে নিরন্তর।
খুব সম্প্রতি বাস-ট্রেনের ভাড়া অত্যধিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় পিনিয়েরা সরকার। তার প্রতিবাদেই রাস্তায় নামেন দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের লাখো মানুষ। লুটতরাজ আর বিক্ষোভ সামলাতে সেনা নামাতে হয় সরকারকে। সরকারি সম্পত্তি নষ্টের পরিমাণ প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। সাত হাজার বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হন। তবে ১৭ জনের মৃত্যুর পরে সান্তিয়াগোতে এখন নিয়ম করেই রাত এগারোটা থেকে শুরু হয় কার্ফু। শহরের গলিতে গলিতে ঘোরে প্রায় কুড়ি হাজার সেনা। কালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। দুপুর থেকে জমতে থাকা ভিড় তাই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাল ঘরেও ফিরে গিয়েছে। অশান্তির ভয়ে শহরের প্রায় প্রতিটি গলিতেই সেনা নামিয়েছিল সরকার। বিক্ষোভ চলাকালীন কালো গাড়িতে তারা অপেক্ষা করলেও গোলমাল বা অশান্তির কোনও খবর মেলেনি।
কাল সান্তিয়াগোর ধনী পাড়া অবশ্য শান্তই ছিল। কিন্তু শহরের বাকি এলাকায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের স্রোতটা ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের গভর্নর কার্লা রুবিলার বারায়োনা টুইট করে লেখেন, ‘‘আজ এক ঐতিহাসিক দিন। লক্ষ লক্ষ মানুষের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলই বলে দেয় চিলিতে নতুন দিন আসছে। ষাট লক্ষের শহরে পথে নেমেছেন দশ লক্ষেরও বেশি।’’