ডিএমপি নিউজঃ ড্রাইভারকে কোন অবস্থায় চুক্তিভিত্তিক গাড়ি দেয়া যাবে না। আপনারা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি দেয়া বন্ধ করুন। প্রত্যেক বাস স্টপেজে টিকিট কাউন্টার বসিয়ে টিকিট দিয়ে যাত্রী উঠান। পুলিশ আপনাদের পাশে থাকবে। রংচটা, ফিটনেস বিহীন ও মডেল আউট কোন গাড়ি ঢাকা শহরে চলতে দেয়া হবে না। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে জোড়ালো অভিযান চালানো হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বেলা ১২টায় গুলিস্তানস্থ মহানগর নাট্যমঞ্চে ট্রাফিক সচেতনতামূলক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে রাজপথে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক। সেজন্য আমরা আপনাদের শ্রদ্ধা করি। শুধু আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হবে না। সমাধান আসবে আলোচনা বাস্তবায়নের উপর। মেধাবী ছাত্র আবরারের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা রাস্তায় শৃংখলা রক্ষা করতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমাদের সবার। এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারেন না। আমরা কেউ চাইনা এরকম দুর্ঘটনা হোক। সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কাজ করলে এমন অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা দেখতে হতো না। দুর্ঘটনার প্রধান সমস্যা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো। চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর ফলে রাস্তায় যানজটসহ সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ঘটনা।
রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলা সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটির ঢাকায় চলাচলের অনুমতি ছিল না। ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রুট পারমিট ছিল ওই বাসটির। শুধু তাই নয়, ওই বাসটির নামে এর আগে ২৭ বার প্রসিকিউশন দেয়া হয়েছিল। তাহলে সুপ্রভাত পরিবহনের এই বাসটি রাজধানীতে কিভাবে চলাচল করছিল? এই অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী।
পথচারীদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রীজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হলে ঐ পথচারীকে জরিমানাসহ আটক করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজ পর্যন্ত গাড়ির দরজা বন্ধ রাখতে হবে। রুট পারমিট অনুযায়ী গাড়ি চালাতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে তাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। শ্রমিক ও মালিক বিরোধী কোন কাজ আমরা করবো না। কিন্তু কথা দিতে হবে সড়কে শৃংখলা আনতে কাজ করতে হবে।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ গাড়ি চালানো, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানো, রাস্তায় গাড়ি আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশ দেন কমিশনার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সড়কের শৃংখলা আনয়নে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান সময়ে আমাদের প্রধান সমস্যা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো। কাউন্টারে টিকিট দেয়া সিস্টেম চালু হলে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ হবে। সেই সাথে কমবে সড়কের দুর্ঘটনার চিত্র। চালকের লাইসেন্স না থাকলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে অন্যায় ছাড়া ব্যবস্থা নিলে এটা ঠিক হবে না। সড়কে শৃংখলা আনতে আগামী মাস থেকে কাউন্টারের মাধ্যমে টিকিট কেটে গাড়িতে যাত্রী নেয়া হবে। নতুন প্রশিক্ষিত ড্রাইভার তৈরিতে রাজউক ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতিকে পূর্বাচলে জায়গা বরাদ্দ দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা পরিবহন মালিক সমিতি নিজেদের টাকা খরচ করে দক্ষ ড্রাইভার তৈরি করব।
বাংলাদেশ পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হলে আমরা সবাই একতরফা ড্রাইভারকে দোষী করি। সড়কে চলাচলে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের শিক্ষা জীবনে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। সেজন্য ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন অন্তর্ভূক্ত করা জরুরী।
এসময় ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ট্রাফিক শৃংখলা আনয়নে সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভায় তাদের বক্তব্য রাখেন।
উক্ত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় বিপিএম, পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমদসহ ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতিসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।