কিডনির পাথর একটি প্রচলিত রোগ। এটি কেন হয়? এ বিষয়ে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. সোহরাব হোসেন সৌরভ। বর্তমানে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান ও অ্যাডভান্সড সেন্টার অব কিডনির অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কিডনিতে পাথর হয় কেন?
উত্তর : তার আগে আমি একটু বলি কিডনি কী এবং কোথায় থাকে? কিডনি হলো ছাঁকুনি যন্ত্র। ঠিক চা আপনারা ছেঁকে ছেঁকে যেভাবে তৈরি করেন, সেভাবে কিডনিও একটি ছাঁকুনি যন্ত্র। দেহের বর্জ্য অংশ রক্তের থেকে ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। আর বিশুদ্ধ অংশটি আবার রক্তস্ত্রোতে ফেরত নিয়ে আসে। এটিই হলো কিডনির কাজ।
মুখোমুখি দুটো পাঁচ অক্ষরকে যদি আমরা মেরুদণ্ডের দুই পাশে রেখে দিই, ঠিক এর নিচের দিকে, বুকের খাঁচার কিছুটা অংশ এর পাশে থাকে, তবে পিঠের দিকে থাকে, মেরুদণ্ডের দুই পাশে থাকে—এটি কিডনি। শিমের বিচিকে উল্টো মুখোমুখি রাখলে যেমন দেখা যাবে, এ রকম অনেকটা। তো, এই হলো কিডনি। কিডনি হলো সর্বাধুনিক ছাঁকুনি যন্ত্র।
এখন ছাঁকুনি করতে গিয়ে যেসব বর্জ্য রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যদি পাথরের উপাদান থাকে, তাহলে পাথর তৈরি হয়ে যেতে পারে। এর মানে প্রস্রাবের মধ্যেই কিছু উপাদান থেকে যায় কিডনির পাথর তৈরি করার।
অনেক সময় রোগীরা বলে যে কেন পাথর হচ্ছে? এই পাথর কেন হচ্ছে এটি গবেষণা করতে গিয়ে দেখা গেল, শতকরা ৬৫ ভাগ কারণ আমরা জানি না। অন্তত ৩৫ ভাগ কারণ আমরা জেনে ফেলেছি। এই ৩৫ ভাগকেও যদি প্রতিরোধ করা যায় যে কেন পাথর হচ্ছে, আমরা যদি বের করে ফেলি, তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিই, তাহলে তো আমরা রেহাই পেতে পারি। আর পাথর হলে কেবল যে কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে সেটি নয়, প্রথমে প্রচণ্ড ব্যথা দিয়ে শুরু হবে, আবার অনেকের হয়তো ব্যথা হলো না, কিডনিভর্তি পাথর আছে, তবে কোনো ব্যথাই হলো না।
আর কারো কারো ছোট ছোট পাথর, তবে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড ব্যথা হলো। এভাবে কিডনির পাথরের রোগ শুরু হতে পারে। আর কখনো কখনো কিডনির পাথরের রোগীরা আসে যে তার কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এমন হয় যে সে জানেই না তার শরীরে হয়তো একটি কিডনি আছে।
আর কখনো কখনো কিডনির পাথরের রোগীরা এসে বলে, তার কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এমন হয়তো সে জানেই না তার শরীরে মাত্র একটি কিডনি। আর অনেকের একটি কিডনি অকেজো, আরেকটি কিডনি সচল। সচল কিডনির মধ্যেই পাথর হয়ে গেছে।
কিডনি রোগী আমাদের কাছে আসে একটি সংক্রমণ নিয়ে, গায়ে জ্বর জ্বালা—এসব নিয়ে। আমাদের কাছে আসে কিডনির ব্যথা নিয়ে। কিডনির অবস্থান যেহেতু পিঠের দুই পাশে, পেটের ওপরিভাগ—সেই অংশের ব্যথা নিয়ে আসে। ছোট পাথরটি যদি বের হয়ে কিডনির নল দিয়ে যায়, যাকে বলি ইউরেটার, এটি দিয়ে নিচে নেমে বের হতে থাকে, তখন যে অংশে আটকে যাবে সে অংশের ব্যথা হয়। এমনকি তলপেটের ব্যথা নিয়েও পাথরের রোগীরা আমাদের কাছে আসতে পারে।