১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির উল্লসিত জনতা হাতুড়ি-শাবল দিয়ে আজকের দিনে গুঁড়িয়ে দেয় বিভেদ সৃষ্টিকারী ওই দ্য বার্লিন ওয়াল। গোটা ইউরোপ কেঁপে ওঠে বার্লিন দেয়াল পতনের শব্দে। দ্য বার্লিন ওয়ালের (বার্লিন দেয়াল) পতনের আজ ৩০ বছর পূর্ণ হলো।
জানা যায়, কমিউনিস্ট জার্মান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক (জিডিআর) সেদিন দেয়াল ভাঙার কয়েক মিনিট আগে এক ঘোষণায় জানায়, পূর্ব জার্মানির বাসিন্দাদের ওপর আর কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু বার্লিন দেয়ালের পতনের তিন দশক পরও জার্মানি অদৃশ্য এক দেয়ালে বিভক্ত হয়ে আছে।
বার্লিনের হামবুল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন মাওয়ের মতে, আজও জার্মান সমাজে অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে, যার মধ্যে অর্থনীতি অন্যতম। তিনি আরও বলেন, ‘উভয় অংশের মানুষের মধ্যে আজও মানসিক ও আচরণগত অনেক পার্থক্য দেখতে পাবেন। সাবেক জিডিআর পার্টিকে বর্তমান জার্মানরা কীভাবে দেখেন তা বিচার করলেই এই পার্থক্য নজরে পড়বে। মানুষ কীভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখে, সমাজের ধনীশ্রেণি, মিডিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের প্রতি জার্মানদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক কিছু বলে দেয়।’
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির বর্তমান নাগরিকরা বলে যে, এখন আর কোনো পার্থক্য নেই। রূপান্তরের ঢেউয়ে সব পার্থক্য চলে গেছে। কিন্তু অধিকাংশ পূর্ব জার্মানিই বলবে যে, এখনো পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
কিছু বিশ্ব জরিপ অনুসারে, পূর্ব জার্মানির প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে মনে করে। সম্পদের ক্ষেত্রে বার্লিন দেয়াল পতনের পর পূর্বাঞ্চলীয় ছয়টি রাজ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার হয়। কয়েক দশকের কমিউনিস্ট শাসনে ওই অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও জনগণকে দরিদ্র করে তুলেছিল। ১৯৯১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, পূর্ব জার্মানির মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১০ হাজার ৭১৭ ডলার। অন্যদিকে পশ্চিম জার্মানদের মাথাপিছু আয় ছিল ২৫ হাজার ৬২ ডলার। গত তিন দশকে অবশ্য এই বৈষম্য কিছুটা কমে এসেছে। তারপরও পূর্ব জার্মানরা এখনো দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে।
বেরেনবার্গা ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হোলগার শেইমডিং জানান, অধিকাংশ ধনী জার্মানের বাস পশ্চিমাংশে। পূর্বাংশে এখনো বড় কোম্পানি, উচ্চ আয়সুবিধা দৃশ্যমান নয়। হ্যালে ইনস্টিটিউটের করা গবেষণায় বলা হয়, জার্মানির ৫০০টি বড় কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৩৬টির সদর দপ্তর পূর্বাংশে অবস্থিত।
পূর্ব জার্মানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিম-লে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই পশ্চিম জার্মানির বাসিন্দা। অথচ সাবেক পূর্ব জার্মানির জনসংখ্যা ছিল ১২ দশমিক ৫ মিলিয়ন আর পশ্চিমের ছিল ৬৬ মিলিয়ন। দেশটির সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানির পূর্বাংশের মানুষ দেশটির অন্য অংশের তুলনায় বয়স্ক, দরিদ্র ও অধিক পুরুষ। দেয়াল পতনের পর প্রায় ১০ লাখ মানুষ পূর্ব জার্মানি ছেড়ে পশ্চিমে চলে যায়। এই অভিবাসিত হওয়া মানুষদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী।
জার্মানির শিক্ষাক্ষেত্রেও এখনো পার্থক্য রয়েছে। পূর্বাংশের স্কুলের শিশুরা গণিতে ভালো হলেও হাই স্কুলে যাওয়ার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার হার তাদের মধ্যে বেশি। পশ্চিমাংশে পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা তুলনামূলক অনেক কম।
দেশ রূপান্তর।