পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতায় টিকে থাকতে নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন নারী অধিকার কর্মীরা।
মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘জেন্ডার সংবেদনশীল জাতীয় বাজেট প্রণয়ন এবং পরিবীক্ষণ প্রক্রিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তারা।
গার্মেন্ট খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে মন্তব্য করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “আগে গার্মেন্টে ৮০-৮৫ ভাগ কর্মীই ছিল নারী। এখন এটি ৬০-৬৫ ভাগে নেমে এসেছে।
“এর কারণ হল প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতার অভাব। কারণ এসব পেশায় এখন প্রযুক্তির ব্যবহার চলে আসছে।”
তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে নারীরা পিছিয়ে যাবে। সে কারণে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে।”
নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবার মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “ব্যাংকগুলো একজন পুরুষ উদ্যোক্তাকে কয়েকশ কোটি টাকা যাচাই-বাছাই ছাড়াই লোন দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু একজন নারী উদ্যোক্তা দুই কোটি টাকা নিতে চাইলে তাকে নানা প্রশ্নের সামনে যেতে হয়।”
নারীর গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “একজন নারী ঘরে রান্নার কাজ করলে অর্থ পায় না। কিন্তু হোটেলে গিয়ে রান্নার কাজ করলে অর্থ পায়।
“মেয়েদের কাজের স্বীকৃতিটা জিডিপিতে হিসাব করা হয় না। কিন্তু এটিকে জিডিপিতে আনা দরকার। আমরা জিডিপি বাড়াতে চাই না, কিন্তু নারীর কাজকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।”
এসময় তিনি নারীদের ‘প্রচলিত গৎবাধা’ কাজের বাইরে এসে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “নারী-পুরুষ অসমতার কারণে আজ জেন্ডার বাজেটের প্রয়োজন হয়েছে।
“জেন্ডার বাজেটে বড় জায়গা হওয়া উচিৎ দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা। কারণ দক্ষ শ্রমিক হিসেবে নারী গড়ে উঠলে সে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “জেন্ডার বাজেট হওয়াটা খুব ইতিবাচক একটি বিষয়। কিন্তু এর প্রণালী কতটুকু প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরতে পারে, নারীর সাথে সম্পৃক্ত কতটুকু- এটা দেখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, “কীভাবে বাজেটটা প্রস্তুত হয় এবং আসলে এটার প্রতিফলন হয় কি না তা জানা জরুরি।
“প্রান্তিক নারী কৃষককে টার্গেট করে বাজেটে তা প্রতিফলিত হতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায়ও নারী অনেক কম। কাজেই কাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনতে হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে।”
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বক্তব্য দেন।