পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম।
মকর মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। ‘মকরসংক্রান্তি’ শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী ‘সংক্রান্তি’ একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।
এই তিথি হিন্দুবিশ্বাসে অতি পবিত্র। এদিন পুণ্যস্নান পূজা ইত্যাদি থাকে। পাশাপাশি ঘরে ঘরে থাকে খাদ্য সংক্রান্ত এক বিশেষ লোকাচারও। তা হল পিঠেপুলি তৈরি। তিন দিন ধরে এই সময়ে ঘরে ঘরে হরেক পিঠে তৈরি করেন বাঙালি মেয়েরা। পিঠের তালিকা দীর্ঘ। তবে ঘরোয়া রান্নাবান্নার জ্ঞানের অভাবে একালে হারিয়ে গিয়েছে তার অনেকগুলিই। এখনও যেগুলি টিকে রয়েছে, সেগুলি হল সেদ্ধপিঠে, দুধপুলি, মালপোয়া ইত্য়াদি।
শীতের পিঠে বললেই মনে আসে সেদ্ধ পিঠের কথা। সেদ্ধ চালের গুঁড়ো, খেজুর গুড়, নারকেল কোরানো, নুন-চিনি সহযোগে এই পিঠে তৈরি হয়।
শীতের আর এক বিশিষ্ট পিঠে দুধপুলি। সেদ্ধপিঠের সঙ্গে এতে লাগে দুধ ও ক্ষীর।
শীতের পিঠের সব চেয়ে আকর্ষণীয় হল সম্ভবত মালপোয়া। এ সময়ে অনেকেই এর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এতে লাগে খেজুর রস, ময়দা, ক্ষীর, খাবার সোডা, মৌরী, নুন, ঘি। গুড় জাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। ময়দা, ক্ষীর, মৌরী, নুন জল দিয়ে ঘন গোলা তৈরি করতে হবে। হাঁড়িতে ঘি দিয়ে পিঠে ভেজে নিতে হবে। তার পর সেগুলি গরম গরম খেজুর রসে ডুবিয়ে নিতে হবে।
শীতের পিঠের আর এক অতি আকর্ষণীয় জিনিস হল লবঙ্গলতিকা। ময়দা, চালের গুঁড়ো, দুধ, নারকেল, চিনি বা গুড়, লবঙ্গ ও তেল লাগে এতে। প্রথমে ময়দা, চালের গুঁড়ো জল দিয়ে মাখিয়ে ময়ান করে নিন। তারপর দুধ জ্বাল দিয়ে নারকেল কোরা চিনি বা গুড় দিয়ে জ্বালিয়ে পুর বানিয়ে নিন। এরপর রুটির মতো তৈরি করে তা গোল করে কেটে ওর মধ্যে নারকেলের পুর দিয়ে চারদিক দিয়ে ভাঁজ করে মাঝখানে লবঙ্গ গেঁথে মুখ আটকে দিন। এবার গরম তেলে একটি একটি করে ডুবো তেলে ভাজলেই রেডি।
শীতের পিঠের আর এক মজার জিনিস নারকেলের তিল পুলি। এর উপকরণ হল ভাজা তিলের গুঁড়ো, খেজুর গুড়, এলাচ গুঁড়ো, দারচিনি, আতপ চালের গুঁড়ো, তেল।