ডিএমপি নিউজ : অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম রচিত গ্রন্থ ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি, স্বৈরাচারের পতন থেকে জঙ্গি দমন’।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ১৮ নম্বর প্যাভেলিয়নে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেেরড (ইউপিএল) স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।
বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘটনাবহুল সময়ে গ্রন্থটির লেখক এ কে এম শহীদুল হক পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বত্রিশ বছরের কর্মজীবনের নানান পর্যায়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে দাগি অপরাধীদেরকে কাছ থেকে দেখেছেন, সাক্ষী হয়েছেন ঐতিহাসিক সব ঘটনার। এসব ঘটনার কোনোটির যেমন রয়েছে জাতীয় স্তরে তাৎপর্য, কোনোটি আমাদের সমাজবাস্তবতাকে গভীরভাবে চিনতে সাহায্য করবে। পুলিশ বিভাগের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন, সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগের সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং ব্যক্তিত্বের সংঘাতের মুখোমুখি হওয়ার অকপট বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে। বিশেষ করে জঙ্গিদের ভয়ংকর রূপে আত্মপ্রকাশ ও তাদের দমনের পর্বটিতে তিনি পুলিশের প্রধান হিসেবে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করে জঙ্গিদমনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
লেখকের কর্মজীবনে অর্জনের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি পুলিশিংসহ বহুবিধ সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণের কৃতিত্বও। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ তারই উদ্যোগে চালু হয়েছে। তার এসব অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। পুলিশসদস্যরা তো বটেই বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও প্রশাসন বিষয়ে উৎসুক যে-কোনো সচেতন পাঠক গ্রন্থটি পাঠ করে স্বাচ্ছন্দ পাবেন।
এ কে এম শহীদুল হক তার লেখা গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন সেই সব পুলিশ সদস্যের প্রতি যাঁরা জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গেছেন।
গ্রন্থটির লেখক এ কে এম শহীদুল হকের জন্ম ১৯৫৯ সালে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের ফরিদপুর জেলার শরীয়তপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) নড়িয়া থানার নর কলিকাতা গ্রামে। তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পুলিশ বিভাগে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
নির্বাচিত, সামরিক, তত্ত্বাবধায়ক, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইত্যাদি মিলিয়ে তিনি ১২টি সরকারের অধীনে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং-এর প্রবর্তক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বাংলাদেশের কমিউনিটি পুলিশিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে আমেরিকার নিউজার্সির মেয়র তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশন কম্বোডিয়া, অ্যাংগোলা ও সুদানে দায়িত্ব পালন করে জাতিসংঘ শান্তি পদকে ভূষিত হয়েছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে ‘Police and Community with Concept of Community Policing’, ‘কমিউনিটি পুলিশিং কী এবং কেন’, ‘Community Policing Concept: Aims and Objectives’ এবং ‘Bangladesh Police Hand Book’।
ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। অবসরগ্রহণের পর তিনি লেখালেখি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকসহ সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছেন।