‘লোকঐতিহ্য জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাংলা একাডেমিতে । জাদুঘরটির সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এটি উদ্বোধন করা হবে।
জাদুঘরটি বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের তৃতীয় তলার পশ্চিম অংশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একাডেমির ‘বর্ধমান হাউসে লোকঐতিহ্য জাদুঘর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজ শিল্প সামগ্রির পাঁচ শতাধিক নিদর্শন নব্য প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘর বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
এ সব সামগ্রী লোকজ শিল্পীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সব নিদর্শনই গ্যালারিতে স্থাপন করা হয়েছে। বাঙালির জীবনের বহুকালের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, গ্রামের সংস্কৃতির নির্দশনগুলো খ্যাতিমান শিল্পীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। জাদুঘরটি নিজস্ব একটি অবস্থান নিয়ে জাতির সামনে উপস্থাপিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামুসুজ্জামান খান বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘লোকঐতিহ্য জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাদুঘরটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা রয়েছে। এ জাদুঘরের মাধ্যমে দেশবাসী আমাদের ঐহিত্যবাহী লোকজ শিল্পকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
দেশের একটি আদর্শ গ্রাম এতে নির্মাণ করেছেন শিল্পীরা। লোকজ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- দারুশিল্প’র সামগ্রী, (কাঠের কাজ), মৃৎশিল্পের অলংকার, লোকবাদ্য যন্ত্র, বাঁশ-বেতের উপকরণ, নকশিকাঁথা, নকশি শিকা, গ্রামীণ জীবনধারার মডেল, কয়েকটি জেলা থেকে সংগ্রহ করা একতারা, দোতারা, সারিন্দা, বাঁশি, ঝাঝ, করতাল, ঢাক, খঞ্জনি।
প্রাচীন ধাতবের পানের বাটা, মাপনি, খলোই, পানথাল, নকশিবাটি, জগ, সরডোষ, চালনি, রেকাবি, সুরাই, ভূঙ্গার, ঝঅর, গামলা, গারু, গ্লাস ইত্যাদি। প্রাচীন এই নিদর্শনগুলো ঢাকার নবাবগঞ্জ, মিরপুর, জিঞ্জিরা, দিনাজপুর, নাটোর, রাজশাহী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। মোগল আমলের একটি বড় ‘আফতাবা (পানি রাখার পাত্র) রয়েছে। রয়েছে কয়েক ধরনের হাতপাখা, মাটির তৈরি সামগ্রী, জামদানি শাড়িসহ পাঁচ শতাধিক নিদর্শন।
জাদুঘরের নিদর্শনগুলো থেকে বাংলাদেশের লোকসমাজের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের স্বরূপ খুঁজে পাবেন দর্শকরা। দেশের মানুষের আত্ম-পরিচয় ফুটে উঠেছে জাদুঘরটিতে। এ দেশের কয়েকজন গুণী লোকশিল্পীর শিল্পকর্ম ডিজিটালি প্রদর্শিত হবে। এরা হচ্ছেন- শোলা শিল্পী গোপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, লোকশিল্পী শামসুন্নাহার খাতুন, লোকশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল ও লোকশিল্পী মানিক সরকার।
বাংলা একাডেমীর পরিচালক শাহিদা খাতুন নবনির্মিত জাদুঘর বিষয়ে বলেন, বাংলা একাডেমির ঐতিহাসিক ভবন হচ্ছে বর্ধমান হাউস। এই ভবনকে অনেক আগেই জাদুঘর করা হয়েছে। এই ভবনেই ‘লোকঐতিহ্য জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। খুব শিগগরি জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে। লোকজ শিল্পসামগ্রীর স্থাপনার শেষ মুহূর্তের কাজ এখন চলছে।
তিনি বলেন, এ জাদুঘরের মধ্যদিয়ে দর্শনার্থীরা দেশের প্রাচীন নিদর্শনগুলো প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। ইতিপূর্বে এ ভবনে ‘জাতীয় সাহিত্য লেখক জাদুঘর’ এবং ‘ভাষা আন্দোলন জাদুঘর ’প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দর্শকদের উপভোগ করার পাশাপাশি লোকঐহিত্য জাদুঘরটি গবেষকরা ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি জানান, একাডেমিতে ইতিপূর্বে লোকঐতিহ্য সংগ্রহশালা ছিলো। এই সংগ্রহশালার সকল নিদর্শন এই জাদুঘরে রাখা হচ্ছে।
‘লোকঐতিহ্য জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করেছে। ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। জাদুঘর নির্মাণে বাংলা একাডেমির কাউন্সিল সদস্য কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ-সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সহায়তায় একাডেমি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে।