ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বাড্ডার আওয়ামলীগ নেতা ফরহাদ আলী হত্যা মামলার মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত ১৩ জুলাই ১৮ তারিখে গুলশান ও মিরপুর শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের নিকট হতে ৪ টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৪ টি ম্যাগাজিনসহ ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের নাম- মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ আরিফ মিয়া, মোঃ আবুল কালাম আজাদ @অনির, মোঃ বদরুল হুদা@ সৌরভ ও মোঃ বিল্লাল হোসেন @রনি।
আজ সকাল সাড়ে ১১ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আবদুল বাতেন পিপিএম।
ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ১৫ জুন ২০১৮ তারিখে বাড্ডা থানাধীন আলীর মোড় এলাকায় শুক্রবার বাদ জুম্মা বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ ফরহাদ আলীকে মসজিদের সামনে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নৃশংশভাবে উপর্যপুরি গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। এই ঘটনার পরে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ এর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
গত ১০ জুলাই ১৮ তারিখ এই হত্যা মামলার আসামী জহিরুল ইসলাম @ সুজনকে গ্রেফতার করার পর তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। উক্ত আসামীর জবানবন্দির ভিত্তিতে গত ১৩ জুলাই ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যার দিকে ডিবি উত্তর বিভাগের একটি টিম গুলশান থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ জাকির হোসেন ও মোঃ আরিফ মিয়াকে গ্রেফতার করে। এ সময় জাকির হোসেন এর কাছে থেকে একটি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল, ০২ রাউন্ড গুলি এবং আরিফ মিয়ার কাছে থেকে ০৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক মহানগরের শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ আবুল কালাম আজাদ @অনির, মোঃ বদরুল হুদা@ সৌরভ ও মোঃ বিল্লাল হোসেন @রনিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের প্রত্যেকের কাছে থেকে ০১টি করে মোট ০৩টি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল ও ০৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিক্সা স্ট্যান্ড ও ডিস ব্যবসায়ীদের নিকট হতে চাঁদা আদায় এর ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধে ফরহাদ আলী খুন হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী @ কলিন্স ও আশিক (প্রত্যেকে বিদেশে পলাতক) হত্যার পরিকল্পনা গ্রহন করে। হত্যাকান্ডের কয়েকদিন পূর্বে রমজান ভারতে চলে যায়, রমজান তার আপন ছোট ভাই সুজন এবং অপর দুইজন সহযোগী জাকির ও আরিফের উপর হত্যাকান্ড সংঘটনের দায়িত্ব দেয়। অপরদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর বাংলাদেশে সামরিক কমান্ডার অমিত তাদের ভাড়াটে শ্যুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ, সাদকে দায়িত্ব দেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৫ জুন ১৮ ইং তারিখ সকালের দিকেই অমিতসহ শ্যুটাররা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার এর সামনে সমবেত হয়। অমিতের নির্দেশনা মাফিক সিদ্ধান্ত হয় নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেবে। আর অমিতের সাথে ব্যাকআপ হিসাবে থাকবে সাদ @ সাদমান। আনুমানিক বেলা ১২.০০ টার দিকে রমজানের ছোট ভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশগ্রহনকারী তিনজন শ্যুটার ও ব্যাকআপ সাদকে জাকিরের সাথে অস্ত্র গ্রহনের জন্য একটা রিক্সা গ্যারেজে পাঠায়। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেয় শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর অন্যতম আস্থাভাজন পুলক @ পলক। এরপর জাকির তাদেরকে নিয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে দেয়। পরিকল্পনা মাফিক আরিফ শ্যুটারদেরকে মসজিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে টার্গেট ফরহাদকে চিনিয়ে দেয়। নামাজ শেষে ফরহাদ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই শ্যুটাররা জনসম্মুখে উপর্যপুরি গুলি করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শ্যুটাররা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত এর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পল্লবী এলাকায় যায়। সেখানে অমিত তার অপর সহযোগী সুজনের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো গ্রহন করে। এ হত্যাকান্ডে অমিত তাৎক্ষণিকভাবে এক লক্ষ টাকা শ্যুটারদের মাঝে বন্টন করে দেয়। হত্যাকান্ডে পর পরেই দেশ ত্যাগ করে রমজানের ছোট ভাই সুজন।
উল্লেখ্য, গত ০৪/০৭/২০১৮ইং দিবাগত মধ্য রাতে গোয়েন্দা পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে অজ্ঞাতনামা দুইজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরবর্তীতে যাদের পরিচয় জানা যায় ফরহাদ হত্যাকান্ডের অন্যতম শ্যুটার, ভিডিও ফুটেজে লাল গেঞ্জি পরিহিত নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত।