ডিএমপি নিউজঃ সরকারের কাছ থেকে বৈধভাবে অস্ত্র ব্যবসা করার জন্য নিয়েছিল অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স। লাইসেন্স নেয়ার পর ছিল না তার কোন বৈধ অস্ত্রের মজুদ। এমনকি সংরক্ষণে ছিল না অস্ত্র ক্রয়-বিক্রির রেজিস্টার। তার প্রধান অস্ত্র ক্রেতা ছিল দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনের দস্যুরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এমনই একজন অস্ত্র ডিলারকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- মোহাম্মদ আলী বাবুল ওরফে মোঃ বাবুল মিয়া। বয়স ৫৭ বছর। গ্রামের বাড়ি চুরখাই, ময়মনসিংহে। মেসার্স নেত্রকোনা আর্মস কোং এর স্বত্ত্বাধিকারী। গ্রেফতারের সময় তার নিকট থেকে দুইটি অস্ত্র ও ১২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে তার গ্রামের বাড়ির মাটির নিচ থেকে ০৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০৬০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। সর্বমোট ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১১৮৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে .২২ বোরের রাইফেল ১টি, একনলা বন্দুক (SBBL GUN) ৪টি, .২২ বোরের পিস্তল ২টি, ৭.৬৫ বোরের পিস্তল ১টি, .৩২ বোরের রিভলবার ২টি। উদ্ধারকৃত গুলির মধ্যে .২২ বোরের গুলি ৬০০ রাউন্ড, .৩২ বোরের গুলি ৫৭৫ রাউন্ড ও ১২ ক্যালিবার কার্তুজ ১০ রাউন্ড।
আজ বেলা ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিটিটিসি’র প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
সিটিটিসির প্রধান উল্লেখ করে বলেন, গত ১৫ মে’২০১৮ তারিখ ডাঃ মোঃ জাহিদুল আলম কাদিরকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে এবং গত ০৩ জুন’১৮ তারিখ তার স্ত্রী মাসুমা আখতারকে গাবতলী এলাকা হতে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডাঃ মোঃ জাহিদুল আলমের ময়মনসিংহের ফ্ল্যাট হতে আরও ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ডাঃ জাহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার বিষয়টি উঠে আসে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুন’২০১৮ তারিখ মেসার্স নেত্রকোনা আর্মস কোং এর স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বাবুলকে বৈধ কাগজপত্রবিহীন ১টি পিস্তল, ১টি রিভলবার ও ১২৫ রাউন্ড গুলিসহ মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও অবৈধ অস্ত্র-গুলি মজুদের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৪ জুন’১৮ তার নিজ বাড়ির মাটির নিচ থেকে বৈধ কাগজপত্রবিহীন আরও ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০৬০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোহাম্মদ আলী বাবুল এর আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধ ডিলারশিপ থাকলেও অধিক মুনাফার লোভে দীর্ঘদিন ধরে সে অবৈধ পন্থায় অস্ত্র কেনাবেচা করে আসছিল। ময়মনসিংহ ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনার কয়েকজন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ডিলারের সাথে তার অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার তথ্য পাওয়া গেছে। বাবুলের বাড়িতে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সিংহভাগ খুলনার ডিলার হয়ে সুন্দরবনের জলদস্যুদের হাতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে সে স্বীকার করেছে।