শেষ মূহূর্তে গিয়ে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে রাজি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর ফলে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট (ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকর হওয়ার হাত থেকে সাময়িকভাবে রক্ষা পেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। তবে সময়সীমা বাড়ালেও জটিল দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে ইইউ।
২০১৬ সালের এক গণভোটে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার রায় দেয় যুক্তরাজ্যের মানুষ। এই বিচ্ছেদই ‘ব্রেক্সিট’ হিসেবে পরিচিত। আগামী ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কার্যকরের পর ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ক চুক্তি নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন টেরেসা মে। তিনি ইইউয়ের সঙ্গে যে ‘ব্রেক্সিট চুক্তি’ করেছেন, তা নিজ দেশের পার্লামেন্টেই অনুমোদন পায়নি। পার্লামেন্টের একাধিক ভোটাভুটিতে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। এ অবস্থায় ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ইইউয়ের কাছে আবেদন জানান টেরেসা মে।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসের স্থানীয় সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ঘোষণা করেন, ব্রেক্সিট নিয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি এড়াতে ইইউ নেতারা টেরেসা মের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। টাস্ক জানান, ইইউ নেতারা মের জন্য দুটি উপায়ের কথা বলেছেন।
প্রথমত, স্বল্প মেয়াদে ব্রেক্সিটপ্রক্রিয়া পেছানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন সময়সীমা হবে ২২ মে। কিন্তু এই পথটি মে তখনই ব্যবহার করতে পারবেন, যদি তাঁর ব্রেক্সিট চুক্তি আগামী সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন পায়।
দ্বিতীয়ত, টেরেসা মে ভোটাভুটিতে হেরে গেলেও যুক্তরাজ্য আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ইইউয়ের সঙ্গে থাকতে পারবে। কিন্তু শর্ত হলো, আগামী মে মাসে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারি নির্বাচনে তাদের অংশ নিতে হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্রেক্সিটপ্রক্রিয়া পিছিয়ে দিতে ইইউয়ের কাছে আবেদন জানাতে হবে।
টাস্কের এ ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তেজনা চলে ব্রাসেলসে। প্রথমে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হঠাৎ করেই পিছিয়ে দেওয়া হয়। দফায় দফায় বৈঠক করেন ইইউ নেতারা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে পরের ভোটাভুটিতে টেরেসা মে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে—মূলত সে বিষয়ে ভাবতেই বেশি সময় নেন ইইউ নেতারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন টেরেসা মে আরো কিছুদিন সময় পেলেন বটে; কিন্তু তাঁর পুরনো চ্যালেঞ্জগুলো রয়েই গেল। এই সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে ব্রিটিশ এমপিদের সমর্থন আদায় করতে হবে তাঁকে। আবার ইইউয়ের বেঁধে দেওয়া দুটি উপায়ের মধ্যে কোনটি বেছে নেবে, তা নিয়েও ভাবতে হবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে।
ইইউয়ের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা। তাঁরা বলছেন, সময়সীমা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে ইইউ অবশ্য এটা পরিষ্কার করতে পেরেছে যে তারাও চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট চায় না। সূত্র : সিএনএন।