ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় নৈশ প্রহরীকে খুন করে ডাকাতির ঘটনায় লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ দুইজন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাষানটেক থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ফয়সাল (২১) ও হৃদয় (২০)। এ অভিযানে লুন্ঠিত ২৭টি হ্যামকো ব্যাটারী, ০৩টি নাম্বার প্লেট ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ গাড়ি উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
২১ মে,২০২১ (শুক্রবার ) দিবাগত রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলা লৌহজং থানার মাওয়া ফেরিঘাট এলাকা হইতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মে,২০২১ (রোববার ) দিবাগত রাতে ভাষানটেক থানার কচুক্ষেত মেইন রোডের পাশে অনিক মটরস দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উক্ত দোকানে ডাকাতির ঘটনাটি দোকানের পাশের বাসার মালিক মজিদ ওরফে মজি ও নৈশ প্রহরী মোঃ সুজন (৪৫) দেখে ফেলায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা নৈশ প্রহরী সুজনকে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। অপর প্রত্যক্ষদর্শী মজিদের ঘাড়ে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে জখম প্রাপ্ত করেন। ডাকাতরা উভয়কে শেরে-বাংলানগর থানা এলাকায় ফেলে চলে যায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ভাষানটেক থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলার তদন্ত শুরু করে ভাষানটেক থানা পুলিশ।
ভাষানটেক থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ডাকাতি মামলার ঘটনা তদন্তকালে অপরাধীদের অপরাধ প্রক্রিয়া ও ঘটনাস্থলের পাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করা হয়।
অফিসার ইনচার্জ বলেন, গত ১৯ মে, ২০২১ (বুধবার) মুন্সীগঞ্জ জেলা সিরাজদিখান থানার বালুচর রাজীবের ভাঙ্গারীর দোকান হতে লুন্ঠিত ২৭ টি ব্যাটারী উদ্ধার করা হয়। চলমান অভিযানে ২১ মে,২০২১ দিবাগত রাতে মুন্সিগঞ্জ এর মাওয়া ফেরিঘাট এলাকা হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপ গাড়িসহ অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ১৫ মে,২০২১ তারিখ দিনের বেলায় ডাকাতদের ২ জন সদস্য অনিক মটরস এর দোকান রেকি করেন। ঐ দিন রাত ১১:০০ টায় মহাখালীর ওয়ারলেস গেইটের সামনে গ্রেফতারকৃতরাসহ ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা একত্রিত হয়। পরবর্তীতে রাত অনুমান ০৩:০০ টার সময়ে সাদা মাহেন্দ্র পিকআপ নিয়ে গ্রেফতারকৃতরা ও তাদের সহযোগী ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যসহ অনিক মটরস এর সামনে আসেন। ডাকাতরা অনিক মটরস এর দোকানের তালা কাটার সময় নৈশ প্রহরী সুজন দেখে ফেলায় ডাকাতদের একজন লোহার রড দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করেন। প্রহরী সুজন রাস্তার উপরে পড়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে মারা যান। ডাকাতরা তাকে পিকআপ গাড়ির পাশে আড়াল করে লুকিয়ে রাখেন। এরপর মজিদ এসে ডাকাতির ঘটনা দেখে ফেলায় ডাকাতদের আরেক সদস্য তার ঘাড়ে লোহার রড দিয়ে আঘাত করিলে সে রাস্তার উপর পড়ে মাথায় জখম ও অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকেও অজ্ঞান অবস্থায় পিকাআপ গাড়ির পাশে আড়াল করে লুকিয়ে রাখেন। ডাকাতরা উক্ত দোকানে প্রবেশ করে ড্রয়ার ভেঙ্গে ৫৫,০০০ টাকা ও ২৭ টি ব্যাটারী নিয়ে গাড়িতে তুলেন।
তিনি আরো বলেন, ডাকাতি শেষে ডাকাতরা পিকআপ চালিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর হয়ে যাওয়ার পথে পঙ্গু হাসপাতালের পাশে নৈশ্ প্রহরী ও বৃদ্ধ লোকটিকে ফেলে রেখে চলে যায়। ডাকাতরা সিরাজদিখান রাজিবের ভাঙ্গারীর দোকানে ব্যাটারী গুলো বিক্রি করেন। এ ঘটনার সহিত জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা ইতিপূর্বে একই পদ্ধতিতে নারায়নগঞ্জ, চিটাগাং রোড, সোনারগাঁও, টঙ্গী, মহাখালী ও মগবাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকানে ডাকাতি করেছে মর্মে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান।
গ্রেফতারকৃত ফয়সাল ও হৃদয়দের ২২ মে, ২০২১ ভাষানটেক থানার রুজুকৃত মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছিল।