স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে যুবসমাজসহ সকলকে রক্ষায় এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী দিবস-২০১৭’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “গণমাধ্যম মাদকের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। ঈমাম সাহেবদের প্রতি আহ্বান, আপনারা নামাজের আগে মাদকের কুফল সম্পর্কে মুসল্লীদের বলুন। শ্রেণি কক্ষে ক্লাসের আগে মাদকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বলবেন, যাতে তারা এর বিরুদ্ধে মনোভাব গড়ে তোলে। সমাজসেবীরা মাদকের ভয়াববহতা সম্পর্কে, সমাজের মানুষকে বলবেন, যাতে তারা সচেতন হতে পারেন। মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে যুবসমাজসহ সকলকে রক্ষায় এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
প্রসঙ্গত, মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৮৭ সালের ২৬ জুনকে মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সারা বিশ্বে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ১৯৮৮ সাল থেকে দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে। এবছর ২৬ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ায় সরকার আজ ২৬ জুলাই সারাদেশে এই দিবসের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকদ্রব্যের অবৈধ চাহিদা হ্রাস এবং অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাই দিবসটির মূল লক্ষ্য।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: জামাল উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য এডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশকে মাদক মুক্ত করার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতিকে সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড এর পাশাপাশি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজকে আরও বেগবান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি তামাক বিরোধী আইন কার্যকরের ফলে দেশে প্রকাশ্যে ধূমপান কমে এসেছে উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনের ভবিষ্যত শিশুদের কাছে ধূমপানের কুফল তুলে ধরতে পারলে আমরা টেকসইভাবে এগিয়ে যেতে পারবো।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মাদক তৈরী হয়না। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে চলে আসে। মাদকের পাচার বন্ধের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তাদের সাথে নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সভাপতির বক্তৃতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদকের অপব্যবহার ও পাচাররোধে প্রতিটি জেলায় জনবলবৃদ্ধিসহ মাদক প্রবণ এলাকায় বিশেষ করে টেকনাফ উপজেলায় একটি শক্তিশালী ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মাদক বিরোধী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত এনজিও ও বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত নিরাময় কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন এবং এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন।