ডিএমপি নিউজঃ মাদকের ভয়াবহতা রুখতে ও চোরাচালান রোধে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়াতে সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত রক্ষা ও মাদক প্রবেশ রুখতে সীমান্তে পর্যায়ক্রমে সেন্সর বসানো হচ্ছে। এর ফলে সীমান্তের কাছে কেউ গেলে সেন্সরের মাধ্যমে বিজিবি টের পেয়ে ব্যবস্থা নিবে।
আজ সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি।
আজ ২৬ জুন ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’। ‘আগে শুনুন, শিশু ও যুবাদের প্রতি মনোযোগ দেয়াই তাদের নিরাপদে বেড়ে উঠার প্রথম পদক্ষেপ’ এই শ্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছে এই আন্তর্জাতিক দিবসটি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য মোঃ ফরিদুল হক এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান, পিএসসি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। মাদক নির্মূলে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক আমাদের দেশে তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমাদের দেশে মাদক ঢুকছে। আমরা ভারত সরকারের সাথে কথা বলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের মাদকের কারখানাগুলো বন্ধ করেছি। কিন্তু মায়ানমার সরকার আমাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করলেও তারা মাদকের কারখানা বন্ধ করছে না। আশা রাখি তারাও ভারতের মত একসময় মাদকের কারখানা গুলো বন্ধ করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাদকাসক্তদের নিরাময়ের জন্য জেলা শহরগুলোতে নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র চলছে। বর্তমানে দেশে ২৩৪টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র কাজ করছে। ঢাকায় রয়েছে দেশের একমাত্র মাদকদ্রব্য পরীক্ষাগার। পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরগুলোতে মাদকদ্রব্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে।’
মাদক ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন,‘মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের স্থান হবে হয় কারাগার, নয়তো কোথায় যাবেন তা আপনারাই ঠিক করে নেবেন। তবুও কাউকে এ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও যারা এ পেশায় পৃষ্ঠপোষকতা করছেন গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তাদের নামের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।’
সুরক্ষ সেবা বিভাগের সচিব বলেন, ‘মাদক নির্মূলের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দন্ড রেখে এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এই সংশোধনে আলাদা বিচারিত আদালত, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি ও মহাপরিচালকের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাস্কফোর্স গঠনসহ নানান বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মাদক নির্মূলের জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করব।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মাদক এমন একটি সমস্যা যা ক্যান্সারের চেয়ে ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি। আমরা নিয়মিত ডিএমপি’র বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চালাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ীর পরিচয় যাই হোক, তাকে ছাড় দেয়া হবে না। মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।’
অনুষ্ঠান শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমান সরকারের সদইচ্ছায় বর্তমানে প্রতিটি জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এর অফিস রয়েছে। গত বছরে মাদক সম্পর্কিত ১২,৫০০ মামলা দায়ের ও ১৩ হাজার আসামী গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাত্র ৪৫০ জন অপারেশনাল সদস্যরা। আমাদের জনবল কাঠামো ১৭০৬ থেকে ৮৫০৮ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এই জনবল পাওয়া গেলে কাজের গতি আরও বাড়বে। এছাড়া প্রতিটি জেলা অফিসে একটি করে গাড়ি পাওয়ার দাবি জানান তিনি।
এরআগে মাদক বিরোধী একটি র্যালী জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। বেলুন উড়িয়ে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০১৮ এর শুভ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, জেল পুলিশ, স্কাউট, বিএনসিসি, শিক্ষক, ঈমাম, বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, ফায়ার সার্ভিস, আহসানিয়া মিশন, মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ।