বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০১৯ উদযাপিত হয়েছে। এছাড়া আগামী শনিবার বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ডা. মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বছর বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “আমার যত্ন, আমার অধিকার”।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া । উপাচার্য বলেন, প্যালিয়েটিভ সেবা হলো সত্যিকার অর্থেই একটি মহতী সেবা কার্যক্রম। এটা হলো নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত, প্রান্তিক সময়ের মানুষ ও পরিবারের ভোগান্তি কমানোর একটি বিজ্ঞান সম্মত প্রচেষ্টা। নিরাময় অযোগ্য জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ যথাযথ চিকিৎসাসেবা এবং পরিচর্যা পাওয়ার অধিকার রাখে। “বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস” এ গণমাধ্যম জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অপর দিকে শনিবার সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও “বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড পলিয়েটিভ কেয়ার দিবস” পালিত হবে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ)-এর প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থানের অঙ্গীকারকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ার (প্রশমন সেবা)কে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবী তুলে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “আমার যত্ন,, আমার অধিকার”।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী শনিবার প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবসে এ ব্লক অডিটোরিয়ামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। ওই দিন সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের কার্যক্রম, হোম কেয়ার রিপোর্ট উপস্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এটুআই কর্তৃক তৈরীকৃত সফটওয়্যার ও ওয়েব পেইজ-এর শুভ উদ্বোধন করা হবে।
বিশ্ব জুড়ে নিরাময় অযোগ্য মৃতুপথযাত্রী মানুষ ও তাদের ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এক হয়ে সারা বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শনিবার এই দিনটি উদযাপন করে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে প্রচারণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটানোই এই দিবসটির মূল লক্ষ্য।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি নাগরিক অধিকার। আমার বা আপনার যে কারোর যে কোন সময় এই সেবার প্রয়োজন হতে পারে। নিরাময় অযোগ্য রোগীর ক্ষেত্রে রোগের যে কোন সময় বা বয়স থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা এবং জীবনের মান উন্নয়নে সহয়তা করাই এই সেবার মূল উদ্দেশ্য। প্যালিয়েটিভ কেয়ার (প্রশমন সেবা) নিরাময় অযোগ্য ও জীবন সীমিতকারী রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক প্রয়োজন নিরূপণ ও সমাধানের জন্য একটি বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা। নিরাময় অযোগ্য বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার, এইডস, কিংবা প্রান্তিক পর্যায়ের হার্ট ফেইলিউর, কিডনি অথবা ফুসসুসের রোগ, স্ট্রোক, স্মৃতিভ্রষ্টতা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত মানুষ এবং তাদের পরিবার এই সেবা ব্যবস্থায় উপকৃত হতে পারেন। সেবা দানের ক্ষেত্রে রোগী বা তার পরিবারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। রোগীর শেষ দিনগুলির ভোগান্তি কমানোর উদ্দেশ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৃত্যুকে তরান্বিত বা দেরী করায় না, বরং মৃত্যুকালীন ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করে । বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনের শেষ দিনগুলিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বের এই চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম পূরণ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বছরের যে কোনো সময় প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের প্রশমন সেবার প্রয়োজন। সারা দেশে বিক্ষিপ্ত ভাবে মাত্র অল্প কিছু স্থানে এই সেবার প্রচলন আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুবন্ধ ৬৭.১৯ তে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করা হয়েছে যার অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩.৮ এ উল্লিখিত সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিধি অর্জনের অন্যতম প্রধান অংশ এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার।