প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পথশিশু ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম’ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই কার্যক্রমের আওতায় পথশিশুদের জন্য ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং কমলাপুরে ২টি শেল্টারহোম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদেরকে প্রশিক্ষণ, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, উন্মুক্ত স্কুলসহ তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব শিশু দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে ২০১৬ সালের ১ অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের খেলার মাঠে সুবিধাবঞ্চিত এবং পথশিশুদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, চলতি বছর ১৬ জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের খেলার মাঠে সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দুস্থ ও পথশিশুদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগের আওতায় ৬টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের খাবার ও বাসস্থানসহ লেখাপড়া এবং চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে শিশুদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া পথশিশু ও ছিন্নমূল শিশুদের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ‘এনাবিলিং এনভায়রনমেন্ট ফর চাইল্ড রাইটস (ইইসিআর)’ প্রকল্পের আওতায় আরবান এলাকায় ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ৯শ’ শিশুকে ১২ হাজার ৬শ’ কিস্তিতে শর্তযুক্ত (বাল্যবাহ, শিশুশ্রম, শারীরিক নির্যাতন প্রতিরোধ) অর্থ সহায়তা বাবদ ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ এর মাধ্যমে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছর মে পর্যন্ত ৩০ হাজার ৬৬৫ জন পথশিশুকে ‘ড্রপ ইন সেন্টার (ডিআইসি)’র মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা সেবা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া ১০ হাজার ৯১৩জন শিশুকে ‘ইমার্জেন্সি নাইট শেল্টার (ইএনএস), ৫১ হাজার ৯৬২জনকে শিশুকে ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস (সিএফএস) এবং ৮ হাজার ২৬৫ জন শিশুকে ‘ওপেন এয়ার স্কুল (ওএএস) অওতায় প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন সিএপিবি প্রকল্পের ‘চাইল্ড হেল্প লাইন ১০৯৮’ কার্যক্রমের মাধ্যমে চলতি বছর মে পর্যন্ত ১ লাখ ২ হাজার ২৭৬ জন বিপদাপন্ন, দুস্থ ও অসহায় শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক (আইডিএ ক্রেডিট) সহায়তায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত ‘সার্ভিসেস ফর চিলড্রেন এ্যাট রিস্ক (এসসিএআর)’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৬ সালে ৩০ জুনে সমাপ্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি সমাপ্তির পর ১১টি জেলা শহরে স্থাপিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাদ্যমে ৬ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের পথ শিশু, কর্মজীবী শিশু, এতিম, মাতা-পিতা বা অভিভাবকের থেকে বঞ্চিত, অন্যের বাড়িতে কাজে নিয়োজিত, পাচার থেকে উদ্ধার, নির্যাতনের শিকার ও হারিয়ে যাওয়া শিশুদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলায় নতুন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বৃহত্তম ১৯টি জেলা শহরে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম’ সম্প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেশে যেন কোন সুবিধাবঞ্চিত শিশু না থাকে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।