বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন অপসারণে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে।
দুই দেশের শূন্যরেখার (জিরো লাইন) আশপাশে পুঁতে রাখা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা হাতে তৈরি বোমা-গ্রেনেড) ও মাইন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা এড়াতে এসব অপসারণে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিসুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এসব মাইন বিস্ফোরণে সেখানে এরই মধ্যে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি ও মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের (এমপিএফ) মধ্যে ১ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছয়দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানান, ‘কারা এসব বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ওই সব এলাকায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো পৌঁছাতে পারেনি। সুষ্ঠু সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা ও পুঁতে রাখা মাইন অপসারণ করে ক্ষয়ক্ষতি পরিহারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে।’
সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। এতে অন্যান্যের মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সার্ভে অব বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ ছিলেন।
অপরদিকে, মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের চিফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্টাফ মেয়ো সেও উইনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ প্রতিনিধিদলে ছিলেন মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাইনগুলোকে পেতেছে তা স্পষ্ট নয়, তবে এ অঞ্চলগুলোতে টহল সম্পসারণের কাজ চলছে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত পরিষ্কার। আমরা কোনো সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেব না। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারও একই অভিমত ব্যক্ত করেছে। সীমান্তের কোথাও এ ধরনের অপরাধীদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলে সেখানে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তের ওপারে ৪৯টি ইয়াবা তৈরির কারখানার তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানা থেকে তৈরি ইয়াবা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। ইয়াবাসহ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য চোরাচালান বন্ধে এমপিএফ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরো জানান, সীমান্তের চোরাচালান প্রতিরোধে উভয় পক্ষ আন্তর্জাতিক সীমান্তের বিধি-নিষেধ পরিপালনে তৎপরতা ও মাঠপর্যায়ের অধিনায়কদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইয়াবা তৈরির কারখানার বিষয়ে আমরা এর আগে একটি তালিকা এমপিএফকে দিয়েছিলাম। তারা এর কোনো হদিস পায়নি বলে জানিয়েছে। তবে সীমান্তে প্রতিনিয়ত ইয়াবা উদ্ধারের বিয়ষটি তারা অবজার্ভ করেছে। তাই এবারও সীমান্ত সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৯টি ইয়াবা তৈরি কারখানার তালিকা এমপিএফ প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ কারখানাগুলো মিয়ানমারে অবস্থিত।
মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের প্রধান সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারাও এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তারা এসব ইয়াবা কারখানা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
রোহিঙ্গাসহ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে আনিসুর রহমান বলেন, সীমান্ত এখন স্থিতিশীল। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে দুই পক্ষেরই তথ্য আদা-প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মিয়ানমার জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা চাইলে এখন সেখানে ফিরে যেতে পারবে।