হ্যান্ডসেট চুরি বা ছিনতাই রোধ ও অবৈধ বা নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি সেলফোনভিত্তিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সনাক্তে ২০১২ সালে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
পরবর্তীতে নানা জটিলতায় এটির বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এনইআইআর স্থাপনের বিষয়ে সম্প্রতি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এটি স্থাপনে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হবে।
প্রতিটি হ্যান্ডসেটে ১৫ সংখ্যার একটি অনন্য নম্বর থাকে, যা আইএমইআই নামে পরিচিত। হ্যান্ডসেটে *#০৬# এ নম্বরগুলো পর পর চাপলে আইএমইআই নম্বর জানা যায়। হ্যান্ডসেটের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, মডেল ও ক্রমিকের সমন্বয়ে গঠন করা হয় আইএমইআই নম্বর। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটগুলোর ক্ষেত্রে এটি মানা হলেও নন-ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটে ভুয়া আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করা হয়। সিডিএমএ প্রযুক্তির হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রে এটি মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফায়ার (এমইআইডি) নামে পরিচিত। ১৬ সংখ্যাবিশিষ্ট আইএমইআইএসভি নম্বরও প্রচলিত রয়েছে, যা আইএমইআইয়ের একটি সফটওয়্যার সংস্করণ। এনইআইআর স্থাপনের মাধ্যমে দেশে ব্যবহূত প্রতিটি হ্যান্ডসেটে থাকা আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়। তবে বাজারে যেসব সেলফোন হ্যান্ডসেট পাওয়া যায়, তার এক-চতুর্থাংশই নকল। এসব সেটে আইএমইআই নম্বর থাকে না বা থাকলেও ভুয়া নম্বর ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বছরে হ্যান্ডসেটের অবৈধ আমদানিতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
উন্মুক্ত দরপত্র ও উন্মুক্ত নিলাম— এ দুটি পদ্ধতির মধ্যে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে এনইআইআর স্থাপনের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। নিলামের মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান এনইআইআর স্থাপন, ব্যবহার ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আইএমইআই নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু হলে হ্যান্ডসেট চুরি ও নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ হবে। এছাড়া রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে। এ ব্যবস্থাটি চালু হলে সেলফোন সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শুধু বৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
এনইআইআর বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিটি গ্রাহকের ফোন কলের সঙ্গে তার ফোন নম্বর, হ্যান্ডসেটের মডেল নম্বর এবং আইএমইআই নম্বরও অপারেটরের সার্ভারে যাবে। এর ফলে সিম কার্ড বদলে ফেলা হলেও হ্যান্ডসেটের তথ্যের মাধ্যমে চুরি হওয়া হ্যান্ডসেট উদ্ধার বা অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এনইআইআরকে সিইআইআর (সেন্ট্রাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) ও টিআইএর (টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণের সুবিধা পাওয়া যাবে।–বণিক বার্তা