আল ওহাবা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ
সৌদি আরবের তায়েফ শহরের ২৫০ কিলোমিটার দূরে এটির অবস্থান। পর্যটকদের কাছে এই জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। আল ওহাবা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ ৮২০ ফুট গভীর। এটির নিচে নেমে আবার ফিরে আসতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। অনেকে আসেন ক্যাম্প করতে।
মদিনা সালেহ’র পুরাতন শহর
আরবের প্রাচীন বাসিন্দাদের শহর এটি। এখনো পুরনো দিনের স্থাপনা ও সমাধির দেখা মিলে। ২০০৮ সালে এই স্থাপনাগুলো ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়।
ঐতিহাসিক জেদ্দা ও মক্কার পথে তোরণ
এটিও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য, অবস্থিত জেদ্দায়। ভারত মহাসাগরের উদ্দেশে ব্যবহৃত বাণিজ্য রুট এখানে । এছাড়া সমুদ্রপথে সৌদিতে এসে যেসব হজযাত্রী মক্কায় যেতে চান তাদের জন্যই এ গেট নির্মাণ করা হয়েছিল।
রিয়াদের মাসমাক দুর্গ
১৮৩৫ সালে দুর্গটি নির্মাণ করা হয়। ১৯০২ সালে নির্বাসিত আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান বিন ফয়সাল আল সৌদ রিয়াদে ফিরে গিয়ে এটি জব্দ করেন। এখানে দুর্গ গড়ে তুলে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল জয় করতে শুরু করেন ও সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
কিং ফাহাদ ফাউন্টেন
কিং ফাহাদ ফাউন্টেনকে ভাবা হয় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ঝরনা। এটি ৮৫৩ ফুট উচ্চতায় পানি ছুরতে সক্ষম। রাতের বেলা ৫শ এর বেশি স্পটলাইটের আয়োজন করা হয় এখানে।
উমলুজ- সৌদি আরবের মালদ্বীপ
বালুময় উমলুজ সৈকতকে বলা হয় সৌদি আরবের মালদ্বীপ। এখান থেকে সুউচ্চ পাহাড় ও মৃত আগ্নেয়গিরির দেখা মিলে।
নিওথেলিক শিল্পকর্ম
পাথরের গায়ে বিভিন্ন লেখা ও শিল্পকর্মের দেখা মিলে এই স্পটে। ইউনেস্কোর মতে এখানে একসময় লেক ছিল। আর তাই পানির প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষ জমায়েত হতো।
দুমাত উল জান্দাল
দুমাত-উল-জান্দাল সৌদি আরব এর আরেকটি প্রাচীন জায়গা। এটি আল জাওাফ প্রদেশে অবস্থিত। এখানকার পরিবেশ এখন অনেক রুক্ষ এবং প্রাণহীন। কিন্তু এর ইতিহাস অন্যরকম সাক্ষ্য দেয়। এক সময় এই পুরো এলাকাটিতে মনুষ্য বসতি ছিল। উর্বর মাটি, মিষ্টি পানি সবই ছিল এখানে। কিন্তু কালক্রমে এই পরিবেশ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এখানকার পরিত্যাক্ত প্রাসাদ্গুলতে তখনকার সভ্যতার ছাপ দেখা যায়। এখানে পাবেন অতি প্রাচীন একটি মসজিদ যার নাম ওমর বিন আল খাত্তাব মসজিদ। এটি তৈরি হয় ৬০০-৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। মসজিদটি একটি বড় রাস্তার পাশে অবস্থিত ছিল। সে রাস্তায় দিয়ে বিভিন্ন দেশের বনিক ও পর্যটকরা যাতায়াত করতেন। রাস্তার পাশে হবার কারণে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে নামায আদায় করতে পারতেন।
হযরত হাওয়া (আঃ) এর কবর
জেদ্দা শহরের আল বালাদ এলাকায় বেশ কিছু প্রাচীন কবরস্থান আছে। এর মধ্যে একটি প্রাচীন কবরস্থানের একটি বিশেষ কবরের পাশে লেখা আছে ‘আমাদের সকলের মা হাওয়া’। তাঁর ভিতরে একটি কবর আছে এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি আমাদের আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ) এর কবর। একসময় এই কবরটি ১২০ মিটার লম্বা, ৩ মিটার চওড়া ও ৬ মিটার উঁচু ছিল। এ থেকেই তখনকার যুগের মানুষের দৈহিক আকৃতির বিশালত্তের প্রমান পাওয়া যায়। কবরটি ক্ষতিগ্রস্ত হবার আগে এর আকার এরকমই ছিল। কিন্তু অনেক যুগ আগেই কবরতির অবস্থার অবনতি হতে থাকে, বিশেষ করে ওয়াহাবিয় আমলে। ওহাবিয়রা মনে করত যে কবরের মত বিষয়কে যত্ন সহকারে সংরক্ষন করার কিছু নাই। তাই অবহলায় ও অযত্নে কবরটি কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়।
আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি
আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি সৌদি আরবের অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর জেদ্দাতে অবস্থিত। এটি একটি বৃহৎ যাদুঘর। এখানে সৌদি আরবের প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক চিহ্নই সংরক্ষিত অবস্থায় দেখতে পাবেন। বিদেশী পর্যটকদের জন্যও এই জায়গাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানকার আরবিয় ধাঁচের স্থাপত্যশৈলী সত্যিই দেখার মত। এই সিটি একসময় ছিল সৌদির রাজা শেখ আব্দুল রউফ খলিল এর বাসভবন। তিনি ছিলেন খুবই ধনি একজন ব্যাবসায়ি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রাসাদকে সরকারী আওতায় এনে যাদুঘর বানিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ৩০০ কক্ষ এবং ১২ টি আলাদা প্রাসাদ মিলে ছিল এই বিশাল বাসভবন। এখানে প্রচুর চিত্রকর্ম, পুরনো দলিল, আসবাবপত্র সহ আরও নানা রকম নিদর্শন রয়েছে।
কিংডম সেন্টার
সৌদি আরবের অন্যতম উঁচু স্থাপনাগুলোর একটি এই কিংডম সেন্টার। এর চাইতে উঁচু অট্টালিকাও আছে সৌদি আরবে, কিন্তু তারপরও কিংডম সেন্টারের গুরুত্ব যেন অন্য গুলোর চাইতে বেশী। এর প্রধান কারন হল এর অসাধারণ স্থাপত্যও শৈলী। এত চমৎকার অট্টালিকা গোটা সৌদি আরবে আর দ্বিতীয়টি নেই। ৯৯ তলা বিশিষ্ট ৯৯২ ফুট উচ্চতার এই চমপ্রদ অট্টালিকা যেন বানিজ্যিক সৌদি আরবের প্রতিক হয়ে উঠতেছে। অত্যাধুনিক শপিং মলের পাশাপাশি এখানে বিখ্যাত ফোর সিজনস হোটেল এবং আধুনিক এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ও শপিং মল আছে। ভেতরে বাহিরে সবখানেই এই টাওয়ার নান্দনিকতার এক অপূর্ব নিদর্শন। কিংডম সেন্টার শপিং মল দেশের অন্যতম বৃহৎ, অত্যাধুনিক এবং নান্দনিক শপিং মল।
সৌদি আরবের শপিং মল
সৌদি আরবের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এর বিশালাকৃতির এবং জাঁকজমকপূর্ণ সব শপিং মল। সৌদি আরবের আবহাওয়া এমনিতে খুব রুক্ষ। বাইরে ঘোরা ফেরা করাটা সেখানে অতটা আরামদায়কও নয়। তাই সে দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের এবং বিদেশী পর্যটকদের কথা ভেবে অনেক আরামদায়ক এবং উন্নত পরিবেশ বিশিষ্ট সব শপিং সেন্টার তৈরি করে রেখেছে। কেনাকাটা, বেড়ানো বা সময় কাটানোর জন্য এই শপিং মলগুলো বেশ চমৎকার। এগুলো সাধারণত বেশ বড় আকৃতির হয়ে থাকে এবং এর ভিতরে সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই আছে। আমরা এখন এরকম কিছু বিখ্যাত মলের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।
সেন্ট্রিয়া মল, রিয়াদ
রাজধানী রিয়াদের অন্যতম বৃহৎ এবং জনপ্রিয় এই সেন্ট্রিয়া মল। এখানে প্রায় সব বিখ্যাত ব্রান্ডের শোরুমই পাওয়া যাবে। খাবার থেকে শুরু করে পোশাক, প্রসাধন সামগ্রি সহ যাবতীয় পন্য পাওয়া যায় এখানে। এখানকার ফুড কোর্ট টা বেশ জনপ্রিয়। ২ তলা বিশিষ্ট কোর্টে পশ্চিমা সকল বিখ্যাত ফাস্টফুড চেইনকে দেখতে পাবেন। রিয়াদ ভ্রমনে গেলে পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় সাধারণত সেন্ট্রিয়া মলের নাম থাকবেই।
আল রাশিদ শপিং মল, খোবার
খোবারের সবচাইতে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ শপিং সেন্টারের কথা বললে আল রশিদ এর নাম চলে আসবে সবার আগে। ৫ তলা এবং ১৫০,০০০ বর্গমিটার আভ্যান্তরিন জায়গা বিশিষ্ট মলটি ১৯৯৫ সালে চালু হয়। পরে ২০০৬ সালে মলটি আরও পরিবর্ধন করা হয়। মলটির ভিতরে প্রায় ১০০০ টি দোকান আছে এবং পারকিংয়ে ৮,০০০ গাড়ি রাখার সুব্যাবস্থা আছে। নামকরা সব বিদেশী ব্র্যান্ডের শোরুমই পাবেন এখানে। খোবার গেলে মলটিতে ঢু মারতে অবশ্যই ভুলবেন না।
রেড সি মল, জেদ্দা
জেদ্দা শহরের সবচাইতে বড় শপিং মল এটি। ২৪২,০০০ বর্গমিটার আয়তনের এই বিশাল মলটি তিন তলা কমপ্লেক্স এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পারকিং বিশিষ্ট। মলটির প্রধান আকর্ষণ হল দানিউব সুপার মার্কেট, স্পার্কি গেম সিটি ও ভারজিন মেগাস্টোর। ২০০৮ সালে যখন এই মলটি উম্মুক্ত করা হয়, তখন এর আভ্যান্তরিন ঝর্নাটি ছিল সৌদি আরবের সর্ব বৃহৎ। এখানেও আপনি সব ধরনের আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের শোরুম পাবেন। ফুড কোর্টেও দেখবেন সব বিখ্যাত ফুড চেইনের মেলা। এর মধ্যে পাবেন, অ্যাপল বি, ম্যাকডোনাল্ডস, কে এফসি, বার্গার কিং ইত্যাদি।
নতুন এবং ঝকঝকে শপিং মল, হোটেল, ইত্যাদির পাশাপাশি এরকম আরও অসংখ্য পুরাতন ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ছড়িয়ে আছে সারা সৌদি আরব এর বুক জুড়ে। যেমন আলা উলা এর পরিত্যাক্ত শহর, হোরেব পরবতমালা, ধিয়াইন/ আকাবাত আল বাহা এর মার্বেল পাথরের গ্রাম, মেরিবাহ এর দ্বিখণ্ডিত পাথর ইত্যাদি। সৌদি আরব আপনাকে নতুন এবং পুরাতন দুই ধরনের অভিজ্ঞতাই আস্বাদন করার সুযোগ দিবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। রুক্ষ মরুভুমির মাঝে থেকেও জীবন যে নতুন নতুন রঙে রাঙানো হতে পারে, সেটা সৌদি আরব ভ্রমণ না করলে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পারবেন না।