স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ ও রফতানি খাত চাঙ্গা করতে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নীতিমালার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্য পূরণ করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ। স্বর্ণালঙ্কার রফতানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধি; স্বর্ণালঙ্কার রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ।’
এছাড়া স্বর্ণখাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি; ভোক্তা-ক্রেতা-স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষণ; সব অংশীজনের অংশীদারিত্ব, কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বর্ণখাতের টেকসই বিকাশের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করাও এই নীতিমালার উদ্দেশ্য বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সারা বিশ্বে শুধু ২০১৬ সালেই অলঙ্কার রফতানি হয়েছে ৬৩৮.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হস্ত নির্মিত অলঙ্কারের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত হয়। ভারতের চেয়ে খুব সামান্য পরিমাণ রফতানি করে বাংলাদেশ।
বিদেশ থেকে লাগেজে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত বিনা শুল্কে স্বর্ণ আনা যাবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আর ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটা বাড়তে পারে।’
নীতিমালায় অনুমোদিত ডিলার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭’-এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোন অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে।
নীতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলঙ্কারের চাহিদা পূরণকল্পে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার আমদানির নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইন প্রস্তুত করবে। অনুমোদিত ডিলার সরাসরি বা প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণবার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলঙ্কার প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। আর অলঙ্কার প্রস্তুতকৃত হলে রফতানি আকারে বিদেশে যাবে। যার মাধ্যমে আমাদের রফতানি সেক্টর যাতে চাঙ্গা হয়।’
আমদানিকারকদের মাসের শুরুতে স্বর্ণের হিসাব মূসক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘স্বর্ণমান যাচাইয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এছাড়া ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশ মেমোর সঙ্গে স্বর্ণ অলঙ্কারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।’