ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সম্মানিত নগরবাসীদের উপস্থিতিতে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাদিবস।
আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় কেক কেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাদিবস উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ পুলিশ’র ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য, বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ, ঢাকাস্থ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপি’র প্রতিষ্ঠা দিবসে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অতীতের পুলিশ বর্তমান পুলিশ এক না। বর্তমান পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক ২ মেয়াদে ৮২ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সার্ভিসকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন নতুন যানবাহন সংযোজন করা হচ্ছে। ফলে জনগণের ডাকে পুলিশ দ্রুত সাড়া দিচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নির্মূলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। যানজট নিরসনে আপনারা আরো সচেষ্ট হয়ে কাজ করবেন। ঢাকা শহরে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। ডিএমপি’র প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে আমাদের স্বপ্নের ঢাকা।
প্রতিষ্ঠা দিবসের বক্তব্যে আইজিপি বলেন, শান্তি সপথে বলীয়ান, এ শপথ নিয়ে ৪৪ বছর আগে ডিএমপি’র পথচলা শুরু হয়েছিল। এই গৌরবময় পথচলা অব্যহত থাকবে। পুলিশ এককভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। সেজন্য প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা ও জনগণের মনে কাছে যাওয়া। ডিএমপি সে কাজটি পেরেছে। ডিএমপি’র প্রতি বেড়েছে মানুষের আস্থা। রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বড় বড় ইভেন্টে নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে ডিএমপি।
তিনি আরো বলেন, থানাকে সেবার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত করতে হবে। থানায় এসে যাতে সকল নাগরিক সমঅধিকার নিয়ে আইনী সেবা পায় সে নিশ্চিয়তা দিতে হবে। ঢাকা মহানগরীর প্রায় ২ কোটি মানুষের মন জয় করে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি। মাদক ও জঙ্গিবাদ আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে মাদক ও জঙ্গিদের নির্মূল করতে হবে। নিরাপদ ঢাকা বিনির্মাণে ডিএমপি’র পথচলা অব্যহত থাকুক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বলেন, উন্নয়ন ও জননিরাপত্তায় পুলিশ সার্ভিসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এই মহানগরের নিরাপত্তা ও মানুষের নিরাপত্তা বিধানে ডিএমপি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষথেকে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো অব্যহত রয়েছে। ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন বৃহৎ ইউনিট। তাদের কর্মতৎপরতায় ঢাকা শহরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ অবস্থান করতে পারে না। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার সত্ত্বেও ডিএমপি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছে।
সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কমিশনার বলেন, ডিএমপি সদস্যরা ঢাকা মহানগরীর প্রায় ২ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। নাগরিক সেবা পৌঁছে যাচ্ছে দৌরগোড়ায়। আমরা থানার সেবার মান অনেক বৃদ্ধি করেছি। নাগরিকের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে ডিএমপি ঈদ ও শীতে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে ঈদবস্ত ও শীতবস্ত বিতরণ করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টের নিরাপত্তায় ডিএমপি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জনগনের সেবার মান নিশ্চিত করা, অপরাধ দমন ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীকে একটি বাসযোগ্য নগর তৈরি করায় আমাদের লক্ষ্য। জনবান্ধব, নারী ও শিশু বান্ধব পুলিশি ব্যবস্থায় ডিএমপি’র ৩৪ হাজার সদস্য বদ্ধ পরিকর।
সম্মানিত নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কমিশনার বলেন, আইনানুগ সকল কাজে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে নগরবাসী অব্যহত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গৌরবময় সেবার ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সম্মানিত নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানান ডিএমপি কমিশনার।
এছাড়াও আজ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মাঠে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা অভিনেতা, অভিনেত্রী , সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা এবং বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন ।
বিশেষ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শাকিব-নুসরাত ফারিয়া এবং ফেরদৌস-তমা মির্জা জুটির অংশগ্রহণে নৃত্য পরিবেশনা করেন। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গিত শিল্পী ইমরান, কর্নিয়া, ঐশী ও পারভেজ। সেই সাথে ছিল বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ এর শিল্পীদের মনোরম নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনা।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মাঠ থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩০মিনিট থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সবশেষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ ফায়ার ওয়ার্কসের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা দিবসের আয়োজন সমাপ্ত হয়।