ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরেও পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহ আগুন এখনও পুরোপুরি নেভানে যায়নি। তবে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। জানা গেছে, একটি বৃষ্টি প্রতিরোধী কভারের কারণেই মূহূর্তের মধ্যে আগুন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
দর্শীরা জানান, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ তলায় আগুণের সূত্রপাত হয়। তারা নীল আগুনের আভা দেখতে পান যা গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে হয়ে থাকতে পারে। ১৯৭৩ সালে নির্মিত এই ভবনটিকে গত বছরই সংস্কার করা হয়েছিল। সেসময়ই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ আর আধুনিকায়নের জন্য বৃষ্টি প্রতিরোধী এক প্রলেপ ব্যবহার করা হয়েছিল ভবনে। সে কারণে তৃতীয়/চতুর্থ তলায় লাগা আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে দেয়ালে থাকা বৃষ্টিপ্রতিরোধী প্রলেপের (ক্ল্যাডিং) কারণেই এমনটা হয়েছে।
গ্রেনফেল টাওয়ারে জিংকের রেইন স্ক্রিন ক্ল্যাডিং ব্যবহার করা হয়েছিলো। ক্ল্যাডিং সাধারণত কাঠ, প্লাস্টিক কিংবা মেটাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি পানি বা বাষ্প বের হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এতে করে বৃষ্টির পানি দেয়ালে প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া নিচের প্রলেপে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম ফিল্ডহাউস বলেন, ‘ক্ল্যাডিংয়ের পেছনের বস্তুগুলো অদাহ্য হওয়ার কথা। আমি জানি না তারা কোনও বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়েছে কিনা।’ তিনিও মনে করেন বৃষ্টি প্রতিরোধক এই ক্ল্যাডিংয়ের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
২০১৬ সালে ভবনটির সংস্কার কাজ করা রাইডন কন্সট্রাকশন অবশ্য দাবি করেছে তারা সবরকম অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আমরা গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের কথা শুনে খুবই মর্মাহত। আমরা হতাহতদের ও তাদের পরিবারের পাশে রয়েছি। রাইডন ২০১৬ সালের গ্রীষ্মেই সংস্কার কাজ শেষ করেছে। সেসময় সকল প্রকার অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তারা আরও জানান, ‘আমরা এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জরুরি সার্ভিসের সঙ্গে একযোগে কাজ করবো। এদিকে গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রুপ অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছিলো যে ভবনটি নিরাপদ নয়। আগুন লাগার পর তারা যায়, ‘আমরা বারবার সতর্ক করে দেওয়ার পরও কেউ শোনেননি। আমরা সবসময়ই বলে এসেছি যেকোন সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৭৪জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘর হারানো শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন কমিউনিটি সেন্টারে।