সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর দুরত্ব ১৫,৪৩৩ কিলোমিটার। অথচ দুই গোলার্ধের দুটি জায়গা একজনের জন্য মিলেমিশে একাকার। নক আউট যুদ্ধের আগে পেলে (Pele) নতুন প্রজন্মের ব্রাজিলকে (Brazil) শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘১৯৫৮ সালে সুইডেনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি আমার বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা ভাবছিলাম। আমি জানি, ব্রাজিল দলের অনেকেই এবার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথম বিশ্বকাপের স্বপ্নও দেখছেন।’ মাঠে ঢোকার আগে তিতে-র (Tite) দলের কতজন পেলে-র সেই পোস্ট দেখেছেন জানা নেই, তবে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে পেলে শুভেচ্ছাবার্তা না দিলেও এই দলটা দক্ষিণ কোরিয়াকে (South Korea) হেলায় ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যেত। যদিও এবার নেইমারদের (Neymar Jr) প্রতিপক্ষ লুকা মদ্রিচের (Luka Modric) ক্রোয়েশিয়া (Croatia)। তবে আর একটা ‘ফাইনাল’ খেলতে নামার আগে তারুণ্যে ভরা ব্রাজিল দল, তাঁদের তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তিকে দারুণভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করল। ম্যাচ শেষ হতেই পুরো দল একটা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সেই ব্যনারে লেখা, ‘পেলে’।
সাম্বা ঝড়ে মাত্র ২৯ মিনিটে খেল খতম। ১৩ মিনিটে নেইমারের মাটি ঘেঁষা শট বিপক্ষের জালে ঢুকতেই এশিয়ার ‘রেড ড্রাগন’-দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একেবারে চুপসে গেল। মাইক হাতে নেওয়া ধারাভাষ্যকার বলেই ফেললেন, ‘ম্যাচটা তো এখানেই শেষ। ব্রাজিলকে জয়ী ঘোষণা করে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যায়!’ এমনিতে ৯০ মিনিটের যুদ্ধে ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনাই চলে না।
তবুও লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে পর্তুগালের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়, এবং ক্যামেরুনের অখ্যাত আবুবাকারের হানায় তিতে-র ব্রাজিলের ১-০ গোলে লজ্জার পরাজয়। সঙ্গে তো চোট-আঘাতের জন্য দলের অবস্থা ‘মিনি হাসপাতাল’ হয়ে যাওয়া আছেই। সবমিলিয়ে ব্রাজিল শিবিরে দুটি ব্যক্তি ব্যাপক চাপে ছিলেন। প্রথমজন হেড কোচ তিতে হলে, দ্বিতীয় ব্যাক্তির নাম এক ও অদ্বিতীয় নেইমার। স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর ফলাফল উলটো হলে তিতে এবং তাঁর সেরা ফুটবলারের যে গর্দান দেশজ মিডিয়া নিয়ে নিত, সেটা আর লেখার অপেক্ষা রাখে না। তবে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে তেমন কিছু ঘটেনি। বরং বিপক্ষকে হেলায় হারিয়ে এবং প্রতিটি গোলের জন্য আলাদা রকমের স্টাইলে নেচে হলুদ রঙে ভরে ওঠা গ্যালারিকে চরম আনন্দ দিল সেলেকাওরা।
তিন গোল কড়ে ব্রাজিল যেন রুপকথার কাহিনী লিখতে শুরু করেছিল! গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামরুনের কাচে হেরেছিল যে দল, আর যে টিমটা দক্ষিণ কোরিয়াকে কাঁদিয়ে ছাড়ছে- এর মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ। পাকুয়েতার দুরন্ত একটি গোলে ৪-০ করল ব্রাজিল। ৩৬ মিনিটে ভিনির পাস থেকে দলের চতুর্থ গোলটা করে পাকুয়েতা একেবারে বিধ্বস্ত করে দেন সন হিউং-মিনদের। তারাও বুঝে যান, এই ম্যাচে বাকি সময়টা শুধু নিয়মরক্ষার জন্য খেলে যেতে হবে তাঁদের। সেই গোলটার পর শুধু আলোচনা হচ্ছিল, ব্রাজিল কত ব্যবধানে জিতে শেষ আটে যেতে পারে। তবে ৭৬ মিনিটে ব্যবধান কমান পাইক সেউং-হো। যদিও ম্যাচের ভাগ্য ততক্ষণে নির্ধারিত হয়েই গিয়েছিল।
এই জয়ের মাঝে একটা ছবি বারবার ভসে উঠছিল। একেক গোলের পর একেক ধরণের নাচ। এই রকম দশ রকমের নাচ নিয়ে নাকি সেলেকাওরা তৈরি হয়ে এসেছে। আমরা সাম্বা দেখেছি। কাতারে কার্নিভাল ব্রাজিল কোন পর্যায়ে নিয়ে যান সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব। এবার শেষ আটে প্রতিপক্ষ গতবারের রানার্স ক্রোয়েশিয়া। ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯:০০ টায় মুখোমুখি হবে দুই দল।–জি নিউজ