ওদের পরিকল্পনা ছিল সুদুর প্রসারী। কাকপক্ষিও যেন টের না পায়। সবকিছু ছিল যেন পরিকল্পনা মাফিক। চলছিলও সেইভাবে। কিন্তু ডিএমপি’র গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগ সবকিছু ভেস্তে দিয়ে তাদের পাঠিয়ে দিল শ্রীঘরে।
ঘটনার পিছনের কথা: ফিরোজ কবীর, বয়স একত্রিশ। পেশায় একজন সাধারণ গাড়িচালক। তিনি অন্যের গাড়ি ভাড়ায় চালাতেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ঢাকা মেট্রো চ-১১-৯৩২৬ নোয়া মাইক্রোবাস নিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। তার নিখোঁজ হওয়ার প্রায় মাস খানেক পর ওই গাড়ির মালিক ফিরোজের নামে মোহাম্মদপুর থানায় একটি চুরির মামলা করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পশ্চিম বিভাগের একটি দল ওই মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে ফিরোজের নিখোঁজের দিন অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি সাদেক ও সুজন নামের দুই যুবক টঙ্গী হতে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার মাইক্রোবাসটি ভাড়া করে। ওই দুইজন আরো দুইজন মেয়েকে নিয়ে সকাল এগারটায় টঙ্গী হতে রওয়ানা হয়ে রাত দশটায় চকোরিয়া বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছায়। সেখান থেকে নবী হোসেন ওরফে পুতিয়া ও মফিজুর রহমান নামে আরো দুইজন ওই গাড়িতে ওঠে। এরপর তারা মেয়ে দুইজনকে পুতিয়ার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে তারা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। প্রায় দশ কিলোমিটার যাবার পর নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়িতে থাকা মফিজ কৌশলে তার মাথায় থাকা টুপি রাস্তায় ফেলে দেয়। টুপি আনার জন্য ড্রাইভার ফিরোজ গাড়ি থামায় এবং মফিজ টুপি আনতে যায়। সেই সময় ড্রাইভারের পিছনে বসে থাকা পুতিয়া ফিরোজের গলায় গামছা দিয়ে প্যাচ দেয়। সাদেক ও সুজন তার হাত পা চেপে ধরে। মফিজ এসে ড্রাইভার ফিরোজের পেটে চাকু মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মফিজ গাড়িটি চালিয়ে কক্সবাজারের দিকে না যেয়ে পুনরায় চকোরিয়ার দিকে ফিরে আসে। কক্সবাজার ঢাকা হাইওয়ের কোটাখালি হাঁসেরদীঘি নামক স্থানে ড্রাইভার ফিরোজের মৃতদেহ ফেলে দেয়। এরপর মফিজ গাড়িটি চকোরিয়ায় নিয়ে এসে পুতিয়ার কাছে রেখে দেয়। সাদেক ও সুজন আবার ঢাকায় ফিরে আসে। এই ঘটনায় চকোরিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
ডিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল, ২০১৮ গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকা হতে সাদেককে গ্রেফতার করে। সাদেকের সূত্র ধরে ৭ মে, ২০১৮ কুমিল্লার ইপিজেড এলাকা হতে মোঃ সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করে।
আর সুজনের দেয়া তথ্যমতে গতকাল (১৯ মে, ২০১৮) ঢাকার কেরানীগঞ্জের আলমনগর জামে মসজিদে তাবলিগ জামাত থেকে গ্রেফতার করা হয় এই নৃশংস হত্যাকান্ডের মূলহোতা মফিজুর রহমানকে। মফিজের দেয়া তথ্যমতে গোয়েন্দা পুলিশ চকোরিয়ায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের দলের অপর অভিযুক্ত মোঃ নবী হোসেন ওরফে পুতিয়াকে গ্রেফতার করে। আর তার হেফাজত হতে গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে সেই নোয়া মাইক্রোবাসটি।
এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সাদেক ও সুজন নিজেদের সম্পৃক্ততা এবং মফিজ ও পুতিয়ার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে।