ডিএমপি নিউজঃ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মাঠে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সম্মানিত নগরবাসীর উপস্থিতিতে আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস।
শনিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কেক কেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার)।
এছাড়াও ডিএমপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য, বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দ, সাবেক আইজিপি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ, ঢাকাস্থ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবসে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক সফলতা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর যে পুলিশের আহবান করেছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশ আজ সেই পুলিশের পরিণত হয়েছে। আজ পুলিশ জনগণের বন্ধু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই কাঙ্খিত স্থানে যেতে হলে টেকসই নিরাপত্তার বিকল্প নেই। আমাদের উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে সাথে পুলিশও আধুনিক হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে আমাদের সাফল্য রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। নতুন প্রজন্মকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে আমরা কাজ করছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যেভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সবকিছুতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সফল হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রতিষ্ঠা দিবসে আবারও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
৪৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আইজিপি বলেন, দেশমাতৃকা সেবা ও জননিরাপত্তা বিধান পুলিশের প্রধান দায়িত্ব। শান্তি সপথে বলীয়ান এই মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে ১৯৭৬ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ৫০টি থানা ও ৩৪ হাজার জনবল নিয়ে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগরবাসীর ভূমিকা অগ্রগম্য। নাগরিকদের মাঝে আইনের প্রতি শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। ঢাকা বাংলাদেশের প্রাশাসনিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন দেশ ও সরকার ব্যবস্থার দর্পন ঠিক তেমনি সকল দিক থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সফলতা, কর্মকান্ড ও ব্যর্থতা দ্বারা অনেকাংশে বাংলাদেশ পুলিশ মূল্যায়িত হয়ে থাকে। এজন্য সম্মানিত নগরবাসীর সাথে ডিএমপি সংহতি ও সোহার্দ্য বৃদ্ধি করে আইন শৃঙ্খলা বজা রাখায় হবে মূল মন্ত্র।
আইজিপি আরো বলেন, আমরা চাই থানাকে সকল সেবার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে। সর্বপ্রথম সেবা প্রত্যাশী থানায় যেয়ে থাকে। থানাকে হতে হবে মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। থানাকে সেই বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা পরিণত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে মাথায় রেখে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ঢাকাকে একটি নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জঙ্গিবাদ, মাদক, সাইবার ক্রাইম ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নগরবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কমিউনিটি ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নগরবাসীদের সাথে পুলিশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নিরাপদ ঢাকা বিনির্মাণে ডিএমপির পথচলা অব্যহত থাকুক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাক মহানগরীর বিশাল জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। ৪০০ বছরের পুরাতন এই ঢাকা শহর বর্তমান বিশ্বে অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে পরিণত হয়েছে। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে মাত্র ৩৪ হাজার জনবল দিয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের আন্তরিকতায় পুলিশ জনগণের বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। এই মহানগরের নিরাপত্তা ও মানুষের নিরাপত্তা বিধানে ডিএমপি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার সত্ত্বেও ডিএমপি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছে।
ডিএমপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে নগরবাসীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সক্ষমতা ও পেশাদারিত্বের কাছে এক অনন্য নজীর স্থাপন করে চলেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সেবাদানে নিরবিচ্ছিন্ন ও সার্বক্ষণিকভাবে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার ব্যাপারে সচেষ্ট আছে। জনবান্ধব পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে টিম ডিএমপির আন্তরিক প্রয়াসের ফলে ঢাকা মহানগরীতে অপরাধ প্রবণতা যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি যেকোন সময়ের তুলনায় আইন শৃংখলার পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে।
কমিশনার বলেন, পুলিশ কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু থানা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের থানার সেবার মান উন্নয়নে প্রতিনিয়ত প্রনোদনামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে থানায় রুজুকৃত প্রতিটি জিডি ও মামলা তদারকি করার জন্য বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সেবার জন্য থানায় আগত সেবা প্রত্যাশিদের কাছ থেকে থানা পুলিশের ব্যবহার ও অন্যান্য বিষয়ে অনুভূতি জানতে প্রতিনিয়ত টেলিফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। থানা পর্যায়ে ব্যপক ডিজিটালাইজেশনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠ ও গতিশীল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সিডিএমএস ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের মত বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়াও ডিএমপি গৃহীত নানান পদক্ষেপ তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার।
তিনি আরো বলেন, শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শান্তি শপথে বলীয়ান হয়ে নাগরিকদের জীবনকে সংঘাতহীন, নির্ভয় এবং নিশ্চিন্ত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৪ হাজার সদস্য বদ্ধপরিকর। ডিএমপি সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তায় কল্যাণ ও শৃঙ্খলার সব চাহিদা পূরণে চেষ্টা করে সানন্দে চিত্তে আর দুরহ কাজকে জনগণের স্বঃস্ফুর্ত সহযোগিতা আমাদের পথের প্রধান পাথেয়।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে শেষ হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে গিয়ে। র্যালিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল স্তরের পুলিশ সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও যুক্ত ছিল ডিএমপির সুসজ্জিত ব্যান্ড দল, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিটসহ অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা।
এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মাঠে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা অভিনেতা, অভিনেত্রী , সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা এবং বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন ।