ডিএমপি নিউজঃ অভাবের সংসার। ময়মনসিংহ জেলার কাকনহাটী গ্রাম থেকে পেটের দায়ে কাজ করতে এসেছিল ১৩ বছরের মেরুনা। ভাবতে পারেনি তার জন্য অপেক্ষা করছিল দুঃসহ যন্ত্রণাদায়ক এক অভিজ্ঞতা।
১৯ জুলাই,২০১৭। সন্ধ্যা অনুমান সাতটা। নিজের বাবা মোঃ আবুল হাশেমকে কাছে পেতেই ভেঙে যায় ধৈর্য্যের বাঁধ। সকলের সামনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে মেরুনা। কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, আমি আর ওই বাসায় কাজ করতে যাব না।
মেরুনা আরও বলছিল তার মনিব মৌটুসী শবনম ওরফে স্বপ্না কাজে একটু ভুল কিংবা দেরি হলেই মারধর করে। মেরুনা গত এক বছর ধরে বিভিন্ন তারিখে মারধর এর চিহ্নস্বরূপ কোমরের বাম পাশে ব্লেড দিয়ে কাঁটা চিহ্ন, পিঠের সমস্ত জায়গায় কাঁটা চিহ্ন, ডান হাতের মধ্যমা আঙ্গুল ভাঙ্গা দেখায়। বাম হাতের বৃদ্ধা ও তর্জুনী আঙ্গুলের মাঝে চাকু দিয়ে কেটে পরে ডাক্তার দিয়ে সেলাই করেছে।
ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, এক বছর পূর্বে মেরুনার চাচাতো বোন মোছা: রোমেলা তাকে ধানমন্ডির পাঁচ নম্বর রোডের ফ্ল্যাট ই/৪ এর বাসার মৌটুসী শবনম এর বাসায় কাজের জন্য রাখেন। সেখানে মেরুনার উপর শুরু হয় অকারণে অমানুষিক নির্যাতন।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের রোজার ঈদের পরে আনুমানিক ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখ দুপুর বেলা বাসার কাজে একটু ভুল হওয়া মাত্রই মৌটুসী শবনম তার বাসায় কাঠের তৈরি বেলন দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে ব্লেড, কাঁচি এবং চাকু দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে এবং আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। সর্বশেষ গত ৯ জুলাই, ১৭ আনুমানিক সকাল সাড়ে সাতটায় চা বানাতে ভুল হলে উক্ত বিবাদী তার বাসায় মেরুনাকে কাঠের তৈরি বেলন দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।
মেরুনা যাতে এসব নির্যাতনের কথা কাউকে না বলে সে জন্য মৌটুসী শবনম মেরুনাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও মেরে ফেলার হুমকি দিত। এমনকি ডাক্তারের কাছে জখমের বিষয়ে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করত।
শুধু তাই নয় মেরুনা যখন পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলত তখন মৌটুসী শবনম সামনে বসে থাকত যাতে তাদের কাছে কিছু বলতে না পারে।
১৯ জুলাই মেরুনার বাবা আবুল হাশেম(৬০) সমস্ত ঘটনা ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশকে জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেরুনাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং গৃহকর্ত্রী মৌটুসী শবনমকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে।