সেতুর প্রথম পিলারের ওপরের অংশে জাজিরা প্রান্তের ৩৭ নম্বর পিলারের ঢালাই হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরেকটি পিলারের ঢালাই হলে উঠে দাঁড়াবে সুপারস্ট্রাকচার (স্প্যান)। ফলে চলতি জুন মাসেই দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু।
৩৭ নম্বর পিলার ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে সেতুর প্রথম পাইল তৈরি সম্পন্ন হচ্ছে। আগামী রোববার, ১৮ জুন ঢালাই হবে ৩৮ নম্বর পিলার। এটির রড বাইন্ডিংয়ের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুই পিলার সম্পন্ন হওয়ায় পরই প্রথম স্প্যানটি (সুপারস্ট্রাকচার) সেতুর ওপর বসানো হবে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দুই পাড়ে ১২টি করে ২৪টি পিলার ছাড়াও ৪২টি মূল পিলারের ওপর ৪১টি সুপারস্ট্রাকচার বসবে। এর মধ্যে ২০টি স্ট্রাকচার তৈরি হয়ে গেছে। বাকিগুলো তৈরির কাজ চলছে চীনের সাংহাই শহরের সিং হোয়াং দাও কারখানায়। তৈরি অবস্থাতেই এগুলো বাংলাদেশে আনা হবে।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে দেশের অন্য জেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সরকারের ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে এক নম্বরে থাকা এ প্রকল্পটির কাজে যেন কোনো অনিয়ম না হয় সেদিকে নজর রাখছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই যাতে সেতুটি বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকই খেয়াল রাখা হচ্ছে। সে হিসেবে ২০১৯ সাল নয় ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
পদ্মা সেতুর কাজের জন্য ৩ হাজার ৬০০ কিলোজুল ক্ষমতার (বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার) হ্যামার এখন বাংলাদেশে। এরই মধ্যে জাজিরা প্রান্তে এর ফিটিংয়ের কাজ করা হয়েছে। এটি এখন ব্যবহার উপযোগী। আজ প্রথমবার বিশাল হ্যামারটি ৪১ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভ করবে। এই পিলারে চারটি পাইল স্থাপন হলেও বাকি রয়েছে আরো দুটি। এই হ্যামার এখানে বাকি পাইলগুলো স্থাপন করবে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, মাওয়া প্রান্তের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের কাজ শুরু হয়েছে ১০ জুন। ২ হাজার ৪০০ কিলোজুল ক্ষমতার পুরোনো হ্যামারে এই পাইল ড্রাইভ হচ্ছে। এ ছাড়া পুরনো নেদারল্যান্ডসের ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটিও মেরামত হয়েছে।
পদ্মা সেতু এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মার দুই পাড় মাওয়া, জাজিরা ও শিবচরে কর্মযজ্ঞ চলছে। মাওয়ায় বড় বড় ক্রেন দিয়ে টেস্ট পাইল বসানোর কাজ চলছে। মাওয়ায় পদ্মার পাড়ে বড় বড় পাইপসহ বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতির স্তূপ পড়ে আছে। নির্মাণসামগ্রী ওঠানো-নামানোর জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বড় বড় যন্ত্রে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ অঙ্গনে (কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে) শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের থাকার জন্য প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে ঘর বানানো হচ্ছে। কয়েকশ’ শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন।